মক্কা মসজিদ , Mecca mosque (mosjid) of Hyderabad is one of the largest mosques of India
| MACCA MOSQUE, HYDERABAD |
বর্ষার কালো মেঘ সরে যেতেই উঁকি মারে নীল আকাশ। তার মধ্যে ভেসে বেড়ানো তুলোর মতো মেঘ, নদীর ধারে শরতের হাওয়ায় ঢেউ খেলা কাশফুল যেন জানান দেয় মা আসছেন। আর বাঙালীর পুজোর সময় বেড়ানো থাকবে না , তাই কখনো হয় ?সেই ভাবনা থেকেই একবার পুজোর ঠিক আগে পা রেখেছিলাম হায়দ্রাবাদে। সেই বছর পুজো ও ঈদ কাছাকাছি থাকায় সারা শহর যেন দ্বিগুন আনন্দে ভেসে গিয়েছিলো। প্রতি বছরই নিজের জায়গায় ঈদের অভিজ্ঞতা থাকলেও সেই বছর আমার সৌভাগ্য হয়েছিল রমজান মাসের শেষ সপ্তাহে হায়দ্রাবাদে থাকবার। দিন দশেক এখানে থাকবার সুবাদে আমার প্রায় সব দর্শনীয় স্থান দেখা হয়ে গিয়েছিল। রমজান মাসের জন্য রাস্তা, দোকান, রেস্তোরা সব কিছু আলো দিয়ে সাজানো। খাওয়ার দোকানগুলো সবাই দাবী করছে যে তারাই সবচেয়ে ভালো হালিম তৈরী করে, এছাড়াও বিরিয়ানীতো আছেই। এরমধ্যে আমরাও দুদিন দুজায়গায় বিরিয়ানী চেখে দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না।
তবে হায়দ্রাবাদ বলতেই যার কথা প্রথম মনে আসে তা হল চারমিনার। আমাদেরও চারমিনার নিয়ে একটু বেশী আগ্রহ ছিল। তাই হাতে সময় নিয়ে গাইডের সাহায্যে পুরো চারমিনার দেখে নিলাম। রাস্তা থেকে হাইটেক সিটির যে ছবি আমরা দেখে থাকি তা নিমেষে পাল্টে গেল চিরমিনার উপরে উঠতেই। চারমিনার থেকে সমগ্র সিটির একটা সুন্দর ছবি আমাদের চোখের সামনে চলে এলো। হাইটেক সিটির মোড়কের আড়ালে যে একটা হেরিটেজ শহর লুকিয়ে আছে তা বুঝলাম। সামনে তাকালেই দেখা যায় ব্যস্ত চারমিনার রোড সোজা চলে গেছে। একটু দূরে ডানদিকে ঐতিহ্যবাহী মক্কা মসজিদ। এছাড়াও দেখা যাচ্ছে সর্দারমহল, নিজামিয়া জেনারেল হসপিটাল। অনেক দূরের গোলকুণ্ডা দুর্গের আবছা ছবিও চোখে ধরা দেয়। ডানদিকে চলে গেছে লাড রোড।
![]() |
| CHARMINAR |
| CHARMINAR ROAD |
গোটা জায়গাটা গমগম করছে। আসন্ন পুজো ও রমজান মাসের কেনাবেচার জন্য অনেক অস্থায়ী দোকান গড়ে উঠেছে চারমিনার রোডের দুইধারে। দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম মক্কা মসজিদের সামনে। নিরাপত্তার ঘেরাটোপে মোড়ানো হায়দ্রাবাদের এই বৃহত্তম মসজিদ। চারমিনার থেকে হাঁটা পথে মাত্র কয়েক মিনিটের পথ এই মসজিদ।
কুতবশাহী রাজবংশের পঞ্চম রাজা মহম্মদ কুলিকুতুব শাহ ১৬১৭ সালে এই মসজিদের নির্মানকাজ শুরু করান। জানা যায় তিনি ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের অতি পবিত্রস্থান মক্কা থেকে আনা মাটি দিয়ে ইট তৈরী করান ও সেই ইট এই মসজিদের খিলান নির্মাণে ব্যবহার করেন। সম্ভবত এই কারনেই এই মসজিদ, মক্কা মসজিদ নামে পরিচতি লাভ করেছে। ১৬১৭ সালে শুরু করা মসজিদের নির্মানকাজ শেষ হয় ১৬৯৪ সালে ঔরঙ্গজেবের আমলে। নির্মানকাজে যুক্ত ছিলেন প্রায় আট হাজার শ্রমিক। মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে প্রবেশ করে প্রথমেই মুগ্ধ হয়ে গেলাম এই মনোরম এই স্থাপত্য শিল্প দেখে। সামনে এক বিশাল চত্বর। কয়েকশো পায়রা সেখানে বসে আছে, ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্ভয়ে। আমরা একটু এগিয়ে যেতেই ছোটখাট একটা ঝড় তুলে এরা ডানা মেলে আকাশে চলে গেল। দুটি অষ্টকোনাকৃতি স্তম্ভের উপর দাঁড়িয়ে আছে এই বিশাল মসজিদ। আবার আশ্চর্যের ব্যাপার হলো মাত্র একটি গ্রানাইট পাথর কেটে এই দুটি বিশাল স্তম্ভ তৈরী করা হয়। ছাদটি ১৫ টি খিলান দ্বারা নির্মিত। মসজিদের তিনদিক পাঁচটি করে খিলান দ্বারা নির্মিত। চতুর্থদিকে একটি উঁচু দেওয়াল নির্মান করা আছে যেটা মেহরাবের জন্য ব্যবহার করা হয়। এখানকার হলঘরটি ৬৭ মিটার লম্বা, ৫৪ মিটার চওড়া ,উচ্চতা ২৩ মিটার। ভারতবর্ষের অন্যতম বড় এই মসজিদে একসাথে দশ হাজার মানুষ প্রার্থনা করতে পারেন। পবিত্র কুর-আনের বাণী খিলানে ও দরজায় খোদাই করা আছে। চারপাশের মিনারগুলি ভালোভাবে দেখলে এদের সৌন্দর্য ও বিশালতা অনুভব করা যায়। মসজিদে খালি পায়ে প্রবেশ করাই প্রথা। সিঁড়ি ভেঙে এক মনোরম কৃত্রিম জলাশয়কে মাঝে রেখে দুই দিক দিয়ে প্রবেশ করার সুন্দর পথ। জলাশয়ের ফোয়ারা মসজিদের সৌন্দর্যকে অনেক গুন বাড়িয়ে তুলেছে। জলাশয়ের পাশে একটি কালো পাথরের তৈরী বসবার জায়গা আছে। জনশ্রুতি দুশো বছর আগে ইরান থেকে আনা এই পাথরের আসনে একবার বসলে পুনরায় মক্কা মসজিদ দর্শন নাকি নিশ্চিত ! এদিক ওদিক ঘুরতে ঘুরতে ও ছবি তোলার নেশায় বেশ খানিকটা সময় কাটিয়ে দিলাম ঐতিহ্যবাহী এই মসজিদ প্রাঙ্গনে।
কিভাবে যাবেনঃ হাওড়া থেকে হায়দ্রাবাদ যাচ্ছে ইস্টকোস্ট এক্সপ্রেস ( ট্রেন নং ১৮৬৪৫ ) এবং হাওড়া থেকে যমজ শহর সেকেন্দ্রাবাদ যাচ্ছে ফলকনামা এক্সপ্রেস (ট্রেন নং ১২৭০৩ ); ১২৭৭৩ শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ এসি এক্সপ্রেস ( বুধবার ); ২২৮৪৯ শালিমার-সেকেন্দ্রাবাদ সুপারফাষ্ট এক্সপ্রেস ( বুধবার ); দুই যমজ শহর হায়দ্রাবাদ ও সেকেন্দ্রাবাদের মধ্যে দূরত্ব ৭ কিলোমিটার , যোগাযোগের মাধ্যম অটো, ভাড়া ২০০ টাকার মতো। হাওড়া থেকে হায়দ্রাবাদের দূরত্ব ১৫৩৯ কিমি।
কখন যাবেনঃ অক্টোবর থেকে মার্চ ঘুরে বেড়াবার আদর্শ সময় ।
কোথায় থাকবেনঃ হায়দ্রাবাদ রেল ষ্টেশনের আশেপাশে থাকবার অনেক ভালো ভালো লজ আছে। প্রাইভেট হোটেলের মধ্যে - হোটেল রাজমাতা, ভাড়া ৮০০ থেকে ২০০০ টাকা ; হোটেল গোপী, ভাড়া ৯০০ থেকে ১৬০০ টাকা; হোটেল লক্ষ্মী, ভাড়া ৭০০ থেকে ১৩০০ টাকা। এছাড়া তেলেঙ্গানা পর্যটনের তারামাটি বারাদারি রিসর্ট , ভাড়া এসি দ্বিশয্যা ১৭০০ টাকা, এসি স্যুইট ২২০০ টাকা( যোগাযোগ ০৪০- ২৩৫২১৮৮৪ )।
খাওয়া দাওয়াঃ এখানকার বিরিয়ানী, হালিম চেখে দেখতেই হবে। প্যারাডাইস, বাবুর্চি রেস্তরাতে বিরিয়ানীর স্বাদ নিতে পারেন।
কেনাকাটাঃ হায়দ্রাবাদী রকমারী মুক্ত , মুক্তের অলংকার, বাদশাহী পোষাক, পাগড়ী।

মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন