ডিজিটাল গুঁতো

 

                               করোনা ভাইরাস আসার আগেকার এক বাস্তব  অভিজ্ঞতার কথা বলছি।  ৯০ দশকের প্রথমের দিকে একটা সময় ছিল যখন বলা হচ্ছিল যতোই শিক্ষিত হওনা কেন কম্পিউটার সম্বন্ধে জানা না থাকলে সে নাকি এক অর্থে নিরক্ষরতা সে সময় এখন পাল্টেছে, নিরক্ষরতা দূরীকরণের পরে ভারত এখন “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”জীবন জীবিকার জন্য বহুমানুষের মত আমাকেও প্রতিটি দিন বাসে করে বাড়ী থেকে অফিস ও অফিস থেকে বাড়ী করতে হয়। তা সেই বাসেই আমার সাথে পরিচয় আধুনিক ডিজিটাল ভারতের। অফিস টাইমের যানবাহন হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই বাসে ভীড় একটু বেশী থাকে। এই সময় অফিস যাত্রী, শিক্ষক শিক্ষিকা, ছাত্রছাত্রী, ব্যবসায়ী এমন কি এক ভিখারিকেও আমি নিয়মিতভাবে এই সময়ে পাই। আমার বাসস্ট্যান্ড থেকে বাস ধরার সুযোগটা নেই বলে যাত্রা শুরুর খানিকটা সময় পরে বাসে উঠি। তখনই শুরু হয় আমার প্রাত্যহিক সংগ্রাম। একদিনের চিত্রটা আপনাদের সামনে তুলে ধরছি। ভীড় বাসে সীট একটিও খালি নেই একটু ঠেলে ,একটু ধাক্কা মেরে ভিতরে প্রবেশ  করলাম। এবার সীট বুকিং এর পালা। ওমা, কাকে জিজ্ঞাসা করব ? বেশীরভাগই কানে হেডফোন লাগিয়ে ডিজিটাল গানের জলসা উপভোগ করছে। জিজ্ঞেষ করাতে দুবার তাকালো, কি যে শুনলো আর কি যে উত্তর দিলো আমি বুঝলাম না। আর একটু এগোলাম, এই একজনকে পেলাম যিনি কানে কিছু গুজে নেই। না, হল না। ইনি শেষ স্টপেজে নামবেন। চেষ্টার ত্রুটি রাখি না। তারও পাশের জনের কাছে পৌঁছাই। কি করে ওনাকে ডিস্টার্ব করি ? উনি ফেসবুকের বন্ধুদের সুপ্রভাত জানাচ্ছেন। দারুন আড্ডা জমে উঠেছে ভার্চুয়াল জগতে। যাক খানিকটা তো চলেই এলাম, আজ না হয় দাঁড়িয়েই চলে যাই। সবে মনটা শান্ত করে দাঁড়িয়ে যাবার মানসিক প্রস্তুতি নিচ্ছি,  কিন্তু একি চলন্ত বাসে মাইক কে বাজাচ্ছে ? এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি আমিই বোকা। “ডিজিটাল ইন্ডিয়া” তে  সবার হাতে মোবাইল ফোন থাকবে না, তা হয় নাকি? ভাল মোবাইল কিনেছেন, এখন কথা বলার দরকার নাই, তাই ফুল ভলিউমে গান শুনছেন । আর আমার মতো অন্যান্য সহযাত্রীরা যারা বসবার জায়গা পাইনি বলে মোবাইল ব্যবহার করতে পারছি না , তাদের কথা ভেবে জোরেই গানটা শোনাচ্ছে্ন। তাতে সবার পছন্দের সাথে ওনার পছন্দ নাও মিলতে পারে !!  এইসব দেখতে দেখতে ও শুনতে শুনতেই আমি বাস থেকে নেমে এলাম। এবার জোড় হাঁটা দিতে হবে, কেননা “ডিজিটাল ইন্ডিয়া”তে অফিসে  “বায়োম্যাট্রিক” হাজিরা। সময়ে না এলেই ডিজিটাল লাল কালি। কিন্তু জোরে হাঁটব কি , রাস্তার মোড়ে বীরভূমের সবচেয়ে ব্যস্ত মানুষটির সাথে দেখা ! কৌতুহল হচ্ছে, ইনি কে ? আরে আপনিও চেনেন, আমি চিনিয়ে দিচ্ছি। আজ তিনি দশ বারোটা ট্রাক, বাস, গাড়ীর মাঝে তিনজনকে মটর বাইকে চাপিয়ে ঘাড় বেকিয়ে মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে বাইক চালাচ্ছিলেন উনি এত ব্যস্ত থাকেন যে এইভাবেই তাকে ফোন ধরতে হয়। আবার তাড়াতাড়িতে হেলমেটটাও মাথায় দিতে ভুলে গেছেন। এবার চিনতে পারলেন তো ? আপনার সাথেও তো মাঝে মাঝে দেখা হয়, তাই না ? যাই হোক এদিক ওদিক করে হাঁপাতে হাঁপাতে কোনমতে অফিসে সঠিক টাইমে পৌঁছালাম, আমাদের দেখে দত্তদা হেসে বললেন “লিঙ্ক নেই”। মনে মনে ভাবলাম একেই বলে বোধহয় “ ডিজিটাল গুঁতো”।                     

  

                                                                                                                                                                                                                                                                                          

মন্তব্যসমূহ