স্বচ্ছতার অপর নাম ডাউকি , Dawki ( Umngot) river is one of the top tourist place of Meghalaya
![]() |
| DAWKI RIVER, MEGHALAYA |
সত্যিই একদিন মনের মানুষকে সঙ্গী করে পৌঁছে গেলাম মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। নানা জায়গা ঘুরতে ঘুরতে পৌঁছে গেলাম এশিয়ার সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন গ্রামের শিরোপা পাওয়া গ্রাম মাওলিলং-এ। সেখানে কয়েক ঘণ্টা প্রকৃতির অদৃশ্য বন্ধনে আটকে গিয়ে এবার এগিয়ে চললাম ডাউকির পথে। পাহাড়ী এই পথ আরামদায়ক নয়। বেশ ঝাকুনি খেতে খেতেই চললাম। এতদিন পাহাড়ী পথে পাইন, দেবদারু দেখতেই অভ্যস্ত ছিলাম। কিন্তু এখানে চোখের সামনে এলো এক অপরিচিত সৌন্দর্য। পূর্ব হিমালয়ের কোলে মাইলের পর মাইল সুপারি বাগানের সৌন্দর্য রাস্তার কষ্ট ভুলিয়ে দেবার জন্য সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। ছবি দেখেই ভালবেসে ফেলা জায়গাটিতে পৌঁছাবার জন্য রাস্তা ও সময় যেন আর শেষ হতে চায় না। বাইরের দিকে চোখ রাখলেই গাছের সবুজ পাতা ও হলদেটে সুপারি ফলের সমন্বয়ে প্রকৃতির আঁকা রঙ্গীন ছবি চোখের আরাম এনে দিচ্ছে। অবশেষে আমাদের ডানদিকের দৃশ্যপট একটু করে পরিবর্তন হতে লাগল। একটা বড় নদীর অংশ ডানদিকে দেখা যাচ্ছে। অনেকেই দেখাল ঐ দূরের দেশটা নাকি বাংলাদেশ !
অবশেষে দেখে দিল সেই নদী, কত চওড়া ! দূর থেকে দেখতে পাচ্ছি আমাদের সামনের রাস্তা ডানদিকে ঘুরে নদীকে তলায় রেখে উপর দিয়ে এক পাহাড় থেকে আরেক পাহাড়ে চলে গেছে। দুই পাহাড়কে যুক্ত করেছে দোলনা সেতু। ডাউকি নামে পরিচিত হলেও এই নদীর আসল নাম উম্গট। অনেক উপর থেকে দেখা যায় চওড়া এই নদী, পাশে খাঁড়াই পাহাড়ের প্রাচীর। নদীর তটে সারি সারি নৌকা দাঁড়িয়ে রয়েছে পর্যটকদের আপেক্ষায়। কত রকমারী তাদের রঙ। বেশ কিছু নদীর জলে ভেসে বেড়াচ্ছে। দেশী বিদেশী সব পর্যটকই উমগটের সৌন্দর্যে মাতোয়ারা। এখানকার নদীর জল এতটাই স্বচ্ছ যে ভেসে থাকা নৌকাগুলিকে পাতলা কাচের উপর রাখা আছে বলে ভুল হয়।
দেখতে দেখতে আমাদের গাড়ী খাসি পাহাড়কে ছেড়ে উম্গট নদীর উপরে দোলনা সেতু অতিক্রম করে জয়ন্তিয়া পাহাড়ে চলে এলো। আমরা এবার জয়ন্তীয়া পাহাড়ের কোল কেটে বানানো পথ বরাবর এগুতে লাগলাম। সমস্যা হল গাড়ী থেকে নেমে আমার কাছের মানুষটির সাথেই বিরোধ বেঁধে গেল। আর লাগবে নাই বা কেন ? এখানে এসে বুঝলাম ডাউকির সৌন্দর্য ও মজা দুই রকমের। পাহাড়ের উপর থেকে বহুদূর অবধি বয়ে চলা নদীর ছবি ; পাহাড়ের ছায়া পড়ে মোহময়ী হয়ে ওঠা পান্না সবুজ জলের রঙ; খাসি, জয়ন্তিয়া পাহাড়ের রূপ, উম্গটের জলে ভেসে চলা অসংখ্য নৌকার সৌন্দর্যের টান ছিন্ন করা খুবই কঠিন কাজ। আবার পাহাড় থেকে সিঁড়ি ভেঙে নদীর বুকে নেমে এলে, এর সৌন্দর্য অন্য রকম। আমার হাতে এস-এল-আর ক্যামেরা, উপর থেকে ছবি তোলার লোভ এড়িয়ে অন্য দিকে চলে যাব – এটা আমি মন থেকে মেনে নিতে পারছি না। শেষ পর্যন্ত বিরোধ মিটিয়ে ঠিক হল, প্রথমে পাহাড়ের উপর থেকে আমরা দুইজনেই এর সৌন্দর্য উপভোগ করব, তারপর নেমে যাব নদীর বুকে।
আমরা এগুতে থাকি নদীকে পাশে নিয়ে। রাস্তার বাঁকে বাঁকে এর সৌন্দর্যও যেন আলাদা হয়ে চোখের সামনে আসছে। নদী পাশে থাকলেও অনেক নীচে, তাতে ভেসে থাকা রঙিন নৌকার ছড়াছড়ি। দূরে দেখা যাচ্ছে গোলাপী রঙের নৌকাতে সাহেব মেম হাতে হাত রেখে হারিয়ে যাতে চাইছেন ডাউকির সৌন্দর্যের চোরা স্রোতে। এবার নদীর বুকে নামার পালা। সিঁড়ি দিয়ে নেমে এলাম নদীর তীরে। এখানে স্পর্শ করা যায় নদীর জল। চারিদিকে বালি ও পাথর দিয়ে সাজানো নদীর চর। প্রচুর পর্যটক ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তবে হ্যাঁ, এত সুন্দর জায়গাতেও নিজের মতো ঘোরাঘুরির কিছু বিধি নিষেধ আছে। কারণ সামনের ঐ বড় পাথরটার পিছন থেকেই আমাদের প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশ। ডাউকি আসলে ভারত বাংলাদেশ বর্ডারে এক ছোট্ট শহর। একই সৌন্দর্য বাংলাদেশী ও ভারতীয়রা নিজের নিজের মতো করে উপভোগ করছেন । মাঝে ভারত ও বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষীরা তাদের কর্তব্যে অবিচল।
হঠাৎ চোখ গেল অন্যদিকে। এখান থেকে দোলনা সেতুকে অপূর্ব
দেখাচ্ছে। দূর থেকে মনে হচ্ছে দোলনা সেতু যেন খাসি ও জয়ন্তিয়া পাহাড়ের মধ্যে বন্ধুত্বের
সেতু হয়ে আছে। এই নদীর তীরে তিনটি গ্রাম আছে – ডাউকি, দারাংগ, শনংপেডং। ডাউকি থেকে
দেড় কিলোমিটার দূরে তামাবিল সীমান্ত। বাংলাদেশ যেতে চাইলে এখান থেকে গাড়িতে মাত্র দু ঘণ্টায় ৫৫
কিলোমিটার দূরে সিলেট পৌঁছে যাওয়া যায়। এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল। হাতে আমাদের সময়
বেশী নেই, তবুও উম্গটের জলে ভেসে যাওয়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। স্বচ্ছ নদীর জলে
নদী গর্ভের চেহারা চোখের সামনে হাজির হলো। স্বচ্ছ জলে গভীরতা কম দেখায়। তাই জলে
ভাসার সময় গভীর জলের নুড়ি পাথরকেও নাগালের মধ্যে বলে ভ্রম হচ্ছিল। নদীর মাঝখানে
থেকে দুপাশের চোখজুরানো দৃশ্য কোনদিন ভুলব না। দেখতে দেখতে আবার নদীর তীরে। নদীর জলে পশ্চিমগামী
সূর্যের রক্তিম ছটা আমাদেরকে ফিরবার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। অগত্যা .........ব্যাক টু শিলং।
![]() |
| DAWKI RIVER |
![]() |
| DAWKI RIVER |
কোথায় থাকবেনঃ ডাউকিতে থাকবার প্রয়োজন নেই। শিলং থেকে ডাউকি দেখে ফিরে আসা যায় শিলং। শিলং এ থাকবার মতো প্রচুর হোটেল আছে। আমি কয়েকটার নাম দিচ্ছি – মেঘালয় পর্যটনের হোটেল পাইনউড ( ফোন ০৩৬৪-২২২৩১১৬ ), প্রাইভেট হোটেল স্বস্তিক, পাইন হিল ( ৯৮৩০৮৮০৯৯৯ ) , হোটেল ইলানা ( ৯৪৩৩৭২৫৭৭৮ )।
কখন যাবেনঃ সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর , ফেব্রুয়ারী থেকে মে যাওয়া যেতে পারে।





মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন