সাতপুরা কি রাণী, PANCHMARI of Madhya Pradesh is listed in UNESCO Biosphere Reserve for its flora and fauna. Popularly known as 'Satpura Ki Rani'
মধ্যপ্রদেশের কাশ্মীর। হ্যা, এই নামেই ডাকা হয়ে থাকে মধ্যপ্রদেশের একমাত্র শৈলশহর পাঁচমাড়িকে। ১১০০ মিটার উঁচুতে সাতপুরা পর্বতমালায় পাঁচটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা এই শীতল জায়গা। সেইজন্য ‘সাতপুরা কি রাণী’ নামেও পরিচিত এই শৈলাবাস। লাল বেলেপাথরে তৈরী পাহাড়, বনজঙ্গল, প্রাচীন গুহা, মনোরম জলপ্রপাত, হ্রদ ,প্রাচীন স্থাপত্য, প্রাগৈতিহাসিক গুহাচিত্র, বন্যপ্রাণ – সব মিলিয়ে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সমৃদ্ধ ভাণ্ডার হচ্ছে এই জায়গা। আমাদের কাজ হচ্ছে পাহাড় , জঙ্গল ঘুরে ঘুরে পাঁচমাড়ির রূপের ঝাঁপি থেকে একটু একটু করে সৌন্দর্যের স্বাদ নেওয়া। তবে এর জন্য ধন্যবাদ দিতেই হবে ক্যাপ্টেন ফোরসিথকে। ১৮৫৭ সালে সিপাহী বিদ্রোহ দমন কালে তিনিই প্রথম খুঁজে পান এই মনোরম শান্তিনীড়টিকে।
পিপারিয়া রেলস্টেশনে পৌঁছে আমাদের রেলযাত্রা শেষ। এখান থেকে গাড়িতে যেতে হবে পাঁচমাড়ি। দূরত্ব মাত্রই ৪৭ কিমি। গাড়ি আমাদের নিয়ে ছুটতে শুরু করলো। আমাদের দেখার শুরুও এখান থেকেই। আমরা গাড়ির ভিতর বসে থাকলেও দৃষ্টি আমাদের গাড়ির বাইরে। অচেনার আনন্দে মসগুল আমরা, তাই গাড়ি যে কখন সমতল ছেড়ে পাহাড়ি রাস্তা ধরেছে তাও বুঝিনি। বাইরে দুপাশে শুধুই সবুজ আর সবুজ। দেখতে দেখতে কোথা থেকে দু ঘণ্টা কেটে গেল তাও বুঝলাম না, পৌঁছে গেলাম পাঁচমাড়ি। কিন্তু প্রথম দর্শনে মনটা খারাপ হয়ে গেল, মনে হল এ কেমন শৈলশহর ? কোনো আকাশ ছোঁয়া শৃঙ্গ নাই, বরফ মোড়া চূড়া নাই। তবে একটু সময় যেতেই ভালবেসে ফেললাম জায়গাটাকে। হোটেলের ঘরের জানলা দিয়ে লাল বেলেপাথরের রুক্ষ অথচ সবুজ মেশানো খাড়া পাহাড়ের অন্যরকম সৌন্দর্য দেখে বুঝতে দেরী হল না যে কেন এই জায়গা সাতপুরার রাণী।
এখানে সকাল থেকেই ঘুরে নিতে হয়। আমরাও সকালের চা পর্ব সেরে প্রথমেই এলাম বাইসন মিউজিয়াম। এখানে টিকিট কেটে মিউজিয়াম দেখার পাশাপাশি গাড়ি বুকিং , বনবিভাগের কাছে অনুমতি নেওয়া ও গাইড নেওয়ার কাজগুলি করে নিলাম । মিউজিয়ামটি বেশ সুন্দর। এখানকার দেখবার জায়গাগুলি সবই পাহাড় ও জঙ্গলে ঘেরা। তাই বেশ কয়েকটা জায়গা দর্শন করার জন্য বনবিভাগের অনুমতি অবশ্যই নিতে হয়। সেই সঙ্গে এটাও মাথায় রাখতে হবে যে ঘোরাঘুরি করার দিনটা যেন বনবিভাগের ছুটির দিন না হয়, সেক্ষেত্রে অনুমতি পেতে অসুবিধা হবে। প্রথমেই এখানকার দেখবার জায়গার তালিকাতে একবার চোখ বোলালে পাওয়া যাবে – জটাশংকর, পাণ্ডবগুহা, হাণ্ডি খো, বড় মহাদেব, বি-প্রপাত, পাঁচমাড়ি লেক, রক পেন্টিং এবং দিনের শেষে ধূপগড়ের সূর্যাস্ত। মিউজিয়াম দেখে শুরু হলো আমাদের ঘোরাঘুরি। হাতে দুদিন সময়, ঠিকমতো ঘুরতে হলে দুদিনও যথেষ্ঠ সময় নয়।
| JATASHANKAR TEMPLE |
জটাশংকর, নাম শুনেই বোঝা যায় শিবের
মন্দির। গভীর গিরিখাতের মধ্যে অবস্থিত এই শিবলিঙ্গ প্রাকৃতির হাতে গড়া।
স্ট্যালাগমাইট পাথর ক্ষয় হয়ে বিভিন্ন আকৃতি ধারন করেছে। অসংখ্য পাথুরে সিঁড়ি
ভেঙ্গে আমরা নেমেই চলেছি মহাদেবের দর্শনে। অবশেষে মহাদেব। এখানে ঝর্ণার জলে পুষ্ট
জলাশয় আছে। মনোরম এই জায়গা দেখার জন্য পর্যাপ্ত সময়ের পাশাপাশি শারীরিক সক্ষমতাও
সমানভাবে দরকার।
| PANDAV GUHA |
পাণ্ডবগুহা, পাহাড়ের মাথায় তৈরী পাঁচটি গুহা। সেখানে পৌঁছালাম একটি সুন্দর পার্কের মধ্য দিয়ে। সম্পূর্ণ পাথুরে এই পাহাড়ের মাথায় যাওয়ার জন্য আমাদের অনেকগুলি সিঁড়ি অতিক্রম করতে হলো। অনেকের বিশ্বাস পাণ্ডবেরা অজ্ঞাতবাস করার সময় এই গুহাগুলিতে থাকতেন। তবে মনে হয় এগুলি বৌদ্ধযুগে তৈরী।
| FOREST VIEW, PANCHMARI |
| BEE FALLS |
পাঁচমাড়িতে ঘোরাঘুরির একটা মজার ব্যাপার হলো , ঘুরতে ঘুরতে কখন যে আমরা জঙ্গলে প্রবেশ করছি আবার কখন যে জঙ্গল থেকে বাইরে চলে আসছি তা বুঝতেও পারছি না। এইভাবে ঘুরতে ঘুরতে একসময় আমরা এক জঙ্গলের সামনে হাজির হলাম। এখানেই আমাদের গাড়ি থেকে নেমে যেতে বলা হলো। এরপর আর বড় গাড়ি যাবে না। তবে এখান থেকে পাহাড়ী পথে জিপসি যায় বি-প্রপাত দেখিয়ে আনার জন্য। তবে পায়ে হেঁটেও যাওয়া যায়। পাঁচমাড়ির সেরা জলপ্রপাত হল বি-ফলস্ বা বি-প্রপাত। আমরা পায়ে হেঁটে যাওয়া শুরু করলাম। পাহাড়ীপথে জঙ্গল, ঝর্ণা অতিক্রম করে শেষে পেলাম বি-প্রপাতকে। অনেক উঁচু থেকে এই জলপ্রপাত নেমে আসছে। নেমে আসার পথে পাথরে ধাক্কা খেয়ে লক্ষ লক্ষ ক্ষুদ্র জলকনায় পরিণত হচ্ছে যা সত্যিই মৌমাছির মতো রূপ নিচ্ছে।
রকপেন্টিং , এটা হচ্ছে পাহাড়ের গুহায় প্রাচীন মানুষদের আঁকা ছবি। রকপেন্টিং দেখব বলে আমরা গাড়ি থেকে নেমে জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে হাঁটছি। সাথে গাইড আছেন, উনি না থাকলে এখানে গুহা খুঁজে বার করা যে অসম্ভব তা পরে বুঝলাম। হাঁটা পথের সৌন্দর্য দারুন। কত রকমের গাছ, কারো বয়স কম, কারো বেশী, কেউ বেশী সবুজ কেউ কম। গাছের কাণ্ডের যে রকমারি রূপ তাও বেশ উপভোগ করছি। প্রকৃতির রকমারী সৌন্দর্য হাতের নাগালে পেয়ে আমরাও কিছুটা ছেলেমানুষের মত আচরণ করছি। অবশেষে গুহা, নানান আঁকিবুকি। এইগুলো নাকি দশহাজার বছরের প্রাচীন। আমার গায়ে কাঁটা দিয়ে উঠল। নিজের চোখে এইসব আঁকা দেখে আমি সত্যিই অভিভূত হলাম।
| PANCHMARI LAKE |
পাঁচমাড়ি লেক আর পাঁচটা লেকের মতোই। এখানে
বোটিং করার সুবন্দোবস্ত আছে। ছোটদের আনন্দই এখানে বেশী। চলে এলাম আর একটি
ভিউপয়েন্ট ‘হান্ডি খো’-তে। এটি প্রকৃতির এক অদ্ভুত সৃষ্টি। অত্যন্ত খাড়া ও গভীর
গিরিখাত এক অপার্থিব সৌন্দর্য উপহার দিয়ে চলেছে। এখান থেকে চারপাশের দৃশ্য অতি
মনোরম।
| VIEW OF DHUPGARH |
| VIEW OF DHUPGARH SUN SET POINT |
| VIEW OF SUN SET, DHUPGARH |
কোথায় থাকবেনঃ মধ্যপ্রদেশ পর্যটনের হোটেল অমলতাস, হিলটপ বাংলো, হোটেল হাইল্যান্ডস, সাতপুরা রিট্রিট। প্রাইভেট হোটেল – হোটেল পাঁচমাড়ী, পাঁচমাড়ী রিজেন্সী।
কিভাবে যাবেনঃ নিকটবর্তী রেল স্টেশন পিপারিয়া। সেখান থেকে ৪৭ কিমি দূরে পাঁচমাড়ী। হাওড়া থেকে পিপারিয়া যাবার সরাসরি ট্রেন ১২৩২১ মুম্বাই মেল।
সেরা সময়- অক্টোবর থেকে মার্চ।
আরো জানার জন্যঃ M.P. TOURISM
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন