মন পালিয়ে পালোলেমে, Palolem Beach is approx 1.61 km long and crescent-shaped; one can view the entire beach from either end.
| PALOLEM BEACH |
সোনালি বালিতে আমার প্রিয় ক্যামেরাটা নিয়ে বসে আছি। আর উপভোগ করে চলেছি সোনালী বালির সাথে নীল জলের খুন্সুটি। অবাক হচ্ছি পৃথিবীর নানা প্রান্ত থেকে ছুটে আসা পর্যটকদের দেখে। সৌন্দর্যের টান এমনই যে আমরা বিভিন্ন জায়গা থেকে এসে জড়ো হয়ে গিয়েছি দক্ষিন গোয়ার এই আপাত নির্জন সৈকতে।
আসলে
আমরা দিন চারেক হলো গোয়ায় পা রেখেছি।
উত্তর গোয়া, দক্ষিন গোয়া ঘুরে অবশেষে
পালোলেম। এই সৈকতের প্রশস্তি অনেকের মুখে শুনে এসেছি। তবে এসেই বুঝলাম, না এলে ঠক্তে
হতো। বড় রাস্তা থেকে নেমে যাওয়া পথ সোজা সৈকতের দিকে চলে গেছে। একটু এগোতেই দুপাশে
কিছু দোকানপাট পেলাম, তাতে বিদেশী পর্যটকদের ভীড়ই বেশী। বিদেশী সিগারেটের দোকানও
রয়েছে। একটু এগোতেই বালির পরিমান বাড়ছে দেখে বুঝলাম বেলাভূমির কাছাকাছি চলে আসছি।
| PALOLEM BEACH |
নারকেল গাছের ছায়াঢাকা পথ শেষে হল সোনালি বালিতে। সারিবদ্ধ নারকেল গাছ সমুদ্র সৈকতকে অতিযত্নে ঘিরে রেখেছে। কেউ ছোট, কেউ লম্বা, কেউ আবার হেলে পড়ে জলের স্পর্শ পেতে চায়। দুদিকে চোখ রাখলেই বোঝা যায় এই সৈকত অন্যদের মতো সরলরেখা বরাবর নয়; দুদিকে বাঁক নিয়ে অর্ধচন্দ্রাকৃতি রূপ নিয়েছে। শুধু তাই নয় সমুদ্রের মাঝখান থেকে একটা মস্ত পাহাড় জল থেকে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে আছে। সে এক অসাধারণ দৃশ্য ! ঢেউয়ের তীব্রতা নেই, জল নীল অথচ স্বচ্ছ। ঠিক যেন একটা প্রাকৃতিক সুইমিং পুল, যেখানে পৃথিবীর সমস্ত সৌন্দর্য পিপাসু মানুষ মজা লুঠছেন। নারকেলবীথির সামনে প্রকৃতির সাথে তাল মিলিয়ে মানানসই একতলা ও দোতলা কটেজ। তবে এখানে পঁচানব্বই ভাগ পর্যটকই বিদেশী। চারদিক দেখছি, উপভোগ করছি আর ধীর গতিতে এগিয়ে চলেছি মিহি বালির উপর দিয়ে। কখনো কখনো ঢেউয়ের হাল্কা ছোঁয়ায় পা ভিজে যাচ্ছে। অসংখ্য স্বল্পবাস বিদেশীনি জল নিয়ে খেলার আনন্দ উপভোগ করছেন। তাদের রঙিন পোষাক নীল জলে এক অপরূপ সৌন্দর্যের সৃষ্টি করেছে। আবার অনেকে জলেই নামতে চান না। তারা রৌদ্রস্নানে ব্যস্ত। ডানদিকে পেলাম সি-ফিস ও পানীয়র সম্ভারে ভরপুর দোকান। তাতেও বেশ ভালো ভীড়। হঠাৎ চোখ চলে গেল এক বয়স্ক বিদেশি পর্যটকের দিকে। হাফ প্যান্ট ও খালি গায়ে হেলানো চেয়ারে বসে সাগর সৌন্দর্যে মজে আছেন। সামনে বিদেশী ব্র্যান্ডের পানীয়। আরো একটু এগিয়ে চলি। কিছু বিদেশী পর্যটক বীচ ভলিবল খেলায় মত্ত।
আমার বাঁদিকে রঙ বেরঙের কয়েকটি নৌকা, একসাথে বাঁধা। সামনে দৃষ্টি যেতেই দেখি বিশাল এক পাথর। এখানেই এক নদী সাগরে এসে মিশেছে। তবে নদীতে হাঁটু জলেরও কম জল। সমুদ্রে দাঁড়িয়ে থাকা পাহাড়টাও এখান থেকে অনেক কাছে। অনেকটা ঘোরাঘুরির পর নীল জলে নেমে পড়ার লোভ সামলাতে পারলাম না। ফিরে এলাম আমার সঙ্গী সাথীদের মাঝে। নেমে পড়লাম জলে। আঃ কি আরাম ! শরীর জুড়িয়ে গেল। পায়ের তলায় বালি বেশ শক্ত, জল স্বচ্ছ, ঢেউয়ের মৃদু ধাক্কা ঠিক যেন নরম হাতের আদর। এতক্ষন সৈকত থেকে সাগরের সৌন্দর্য উপভোগ করছিলাম, এবার এক কোমড় জলে থেকে মুগ্ধ অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলাম পালোলেম সৈকতের দিকে। অর্ধচন্দ্রাকার সৈকতের শোভা বোধহয় জল থেকেই সবথেকে বেশী উপভোগ্য।
ঘড়ির কাঁটা কিভাবে তাড়াতাড়ি ঘুরে গেল আমি বলতে পারব না। দুপুরের খাবারের সময় হয়ে যাওয়ায় জল থেকে উঠতেই হলো। নারকেলবীথির ছায়ায় ভোজনের ব্যবস্থা ছিলো। খাওয়ার পরে একটু বিশ্রাম। দেখতে দেখতে বিকেল গড়িয়ে সূর্যাস্তের সময় হয়ে এলো। এক মায়াবী পরিবেশ সৃষ্টি হলো পালোলেমের বুকে। আলোর তীব্রতা কমতে কমতে হলুদ , কমলা ও শেষে লাল বলের মতো হয়ে সূর্যমামা আরবসাগরের জল ছুঁয়ে ফেললো। কারোর চোখের পলক পড়ে না । দুই পাহাড়ের মাঝখান দিয়ে নীলজলকে কিছুক্ষনের জন্য রাঙিয়ে দিয়ে সূর্যমামা সেদিনের মতো বিদায় নিলেন। আলোর রেশ থেকে গেল আরো কিছুক্ষন। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের প্রকৃতিপ্রেমিক পর্যটকেরা নিজের মতো করে ক্যামেরাবন্দী করে রাখলেন চোখজুড়ানো এই দৃশ্যকে। একদিকে দিনের আলো নিভে গিয়ে অন্ধকারের চাদর ঢাকা নিতে লাগলো পালোলেম, অন্যদিকে ধীরে ধীরে সৈকতের দোকানগুলিতে আলো জ্বলে উঠল।
| Sun set moment of Palolem Beach |
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন