শহীদের রক্তে রাঙা জালিয়ানওয়ালাবাগ- JALLIANWALABAGH where the bullet marks are still raw
ধরমশালার ঠান্ডা পাহাড় থেকে নেমে যখন অমৃতসরে পা রাখলাম তখন শহরের তাপমাত্রা প্রায় চুয়াল্লিশ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড। ঘুরতে ভালবাসলেও নিজের উপর খুব রাগ হল। বোকার মতন এমন ট্যুর প্রোগ্রাম করলাম যে পাহাড় ঘোরার সব মজাটাই উবে গেল। কিন্তু না, লজে গিয়ে বিশ্রাম নিয়ে যখন স্বর্ণমন্দির দেখতে এলাম তখন বুঝলাম, না এলেই বোকা হয়ে যেতাম। আসলে অমৃতসর এমন একটা জায়গা যেখানে সব সময় আসা যায়। চোখ জুড়ানো স্বর্ণমন্দির দেখে মন ভরে গেল। আমরা যে কদিন অমৃতসরে ছিলাম প্রতিদিন বিকেলবেলা স্বর্ণমন্দির দর্শন করেছি। অদ্ভুত এক প্রশান্তিতে মন ভরে যেত। সেই গল্প অন্য একদিন বলব। অমৃতসর শহরটার চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে স্বাধীনতা আন্দোলনের নানান ইতিহাস। সেই রকমই এক জায়গা জালিয়ানওয়ালাবাগ। সেই নিয়েই আজকের দিনে কিছু কথা।
আজ স্বাধীনতাদিবসের শুভদিনে সমস্ত স্বাধীনতা সংগ্রামীদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধা, প্রণাম জানাবার জন্য আমার এই লেখা। স্বাধীনতার সুখ ভোগ করতে করতে আমরা ভুলেই যাই দেশের স্বাধীনতা আনার জন্য সেইসব মানুষগুলো কেমন ভাবে নিজের জীবন তুচ্ছ করে আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন ও শহীদ হয়েছিলেন। এবারে অমৃতসরে এসে ইংরেজদের নৃশংস হত্যালীলার সাক্ষী হয়ে থাকা জালিয়ানওয়ালাবাগ ঘুরে দেখার সুযোগ হল। যদিও সবার এই ইতিহাস জানা আছে , তবুও আজকের দিনে আরো একবার না লিখে পারছি না।
১৯১৯ সালের মার্চ মাসে কুখ্যাত রাওলাট আইন পাশ করে দেওয়া হয়। এর প্রতিবাদে অমৃতসরের মানুষ ৩০শে মার্চ ও ৬ই এপ্রিল, ১৯১৯ তারিখে শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন করেন। এরপরে অমৃতসরের জননেতা ডাঃ সৈফুদ্দিন কিচলু ও ডঃ সত্যপালকে বেআইনী গ্রেপ্তার এবং মহাত্মা গান্ধীকে পাঞ্জাবে প্রবেশের নিষেধাজ্ঞা জারী করলে মানুষ ক্ষোভে ফেটে পড়েন। প্রতিবাদ জানাতে প্রায় পনের হাজার নিরস্ত্র মানুষ ১৯১৯ সালের ১৩ই এপ্রিল বিকেল ৩-৩০ নাগাদ জালিয়ানওয়ালাবাগে এক সভায় সমবেত হন। তার খবর পেয়ে আগেই অমৃতসর শহরে জেনারেল ডায়ার সামরিক আইন জারী করে সভা-সমিতি নিষিদ্ধ করেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞা অমান্য করেই মানুষ সভায় আসেন। তবে জনতা ছিল শান্তিপূর্ণ ও নিরস্ত্র। জালিয়ানওয়ালাবাগ ময়দানের তিন দিক ছিল উঁচু প্রাচীর ঘেরা ও একদিকে সরু রাস্তা। আর এই সুযোগটাই সেদিন নেন জেনারেল ডায়ার। তিনি চারদিক সেনা দিয়ে ঘিরে ফেলে কোন সাবধান বাণী না দিয়েই নিরস্ত্র জনতার উপর রাইফেল ও মেশিনগান থেকে প্রায় ১৬০০ রাউন্ড গুলি চালান। শত শত নিরীহ পুরুষ, মহিলা , শিশু মারা পড়েন। অতর্কিত এই আক্রমনে মানুষ দিশেহারা হয়ে পালাবার পথ খোঁজেন। কিন্তু হায়, চারদিক বন্ধ। মৃত্যু ছাড়া সামনে কিছু নেই। ময়দানের একপাশে ছিল একটা কুঁয়ো। মানুষ বন্দুকের গুলির থেকে নিজেকে বাঁচাবার জন্য ভয়ে এই কুঁয়োতে ঝাঁপ দেন কিন্তু মৃত্যুবরন করেন। শুধু তাই নয় সান্ধ্য আইন জারী করায় মৃতদেহগুলি সেইস্থানেই পড়ে থাকে। জালিয়ানওয়ালাবাগের এই নৃশংস হত্যাকান্ড সমগ্র জাতিকে বেদনায় শিহরিত করে তোলে।
সেই স্মৃতি ও বেদনার ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও রয়েছে জালিয়ানওয়ালাবাগের সেই ময়দান। আমরা সেই সরু পথ দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলাম। আজ শহীদদের স্মরণে সেই জায়গাতে নানান সৌধ করে রাখা হলেও মূল জায়গাগুলো আজও একই আছে। প্রবেশদ্বারের পরেই ডানদিকে ‘অমর জ্যোতি’র শিখা শহীদদের কথা মনে করিয়ে দেয়।
![]() |
| Statue of Udham Singh, Photo: Debjani Mazumder |
প্রবেশদ্বারে প্রথম দিকে কিছু না থাকলেও ২০১৮ সালের ১৩ মার্চ শহীদ উধম সিং এর দশ ফুট উচ্চতার মূর্তি স্থাপন করা হয়েছে। গদর পার্টির সাথে যুক্ত এই দেশপ্রেমিক জেনারেল ডায়ারের ঘটানো এই নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য ১৯৪০ সালের ১৩ই মার্চ লন্ডনে তাকে হত্যা করেন।
![]() |
| Martyrs Well |
ময়দানের বাঁদিকে সেই সুবিশাল মৃত্যুকুঁয়ো আজও সংরক্ষন করে রাখা হয়েছে। কাছে গিয়ে দেখতেই শিউরে উঠলাম। মনে পড়ে গেল সেই নৃশংসতার কাহিনী। পরবর্তীকালে এই কুঁয়ো থেকে ১২০ টি মৃতদেহ পাওয়া যায়।
![]() |
| PEOPLE WERE FIRED AT FROM HARE, Photo: Debjani Mazumder |
যে জায়গা থেকে জনতার উপর গুলি ছোঁড়া হয়েছিল সেই স্থানটিকে সযত্নে রক্ষা করা হয়েছে। যতদিন দেশী বিদেশী পর্যটক এখানে আসবেন তারা সাক্ষী থেকে যাবেন ইংরেজদের বর্বরতার, নৃশংসতার ইতিহাসের। আরো এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে সেই দেওয়াল যেখানে গুলির দাগ আজও টাটকা। এতটাই নির্মমভাবে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল যে দেওয়ালের এক অংশে ৬৪ টি বুলেটের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছিল। আজকে এই ময়দান সবুজ ঘাসে ভরে উঠলেও ভারতবাসীর দৃষ্টি থেকে রক্তের দাগ মুছে দিতে পারেনি। জয় হিন্দ।
![]() |
| Mark of Bullet on the wall, Photo: Debjani Mazumder |







Excellent. Remembering our past struggle is a great idea on this auspicious day.Detail description. But you can add the light and sound show which is performed every evening by Udham Singh as narrator.The voice is rendered by Amitabh Bachchan.
উত্তরমুছুনThanks for your comment and advice. This will help me to do better in future.
উত্তরমুছুনNice idea to saluate our patriot's. Well done keep it up.
উত্তরমুছুন