আকালীপুরের ‘ সর্পাসীনা সর্পভূষণভূষিতা ’ মা কালী ( Goddess KALI , popularly named as Guhya Kali of Akalipur )
আজ কালীপুজো । মা কালী বলতেই আমাদের চোখের সামনে মায়ের যে রূপ ভেসে আসে তা আমাদের চেনা রূপ। এর বাইরেও মায়ের নানান রূপ আছে যে রূপে উনি পূজিত হয়ে থাকেন। তেমনই এক প্রাচীন মা কালীর মূর্তি বীরভূমের আকালীপুরে প্রতিষ্ঠিতা। স্বল্প পরিচিত এই স্থানের ঐতিহাসিক গুরুত্বও যথেষ্ঠ। আজ সেই “সর্পভূষণভূষিতা” মা কালীর কথাই লিখব।
বাস্তব অভিজ্ঞতায় দেখা যায়, যত মানুষ তারাপীঠ দর্শনে আসেন তত মানুষ সামান্য একটু দূরেই বীরভূমের পাঁচ সতীপীঠের একপীঠস্থান নলহাটী আসেন না। আবার নলহাটী থেকে মাত্র ১৬ কিমি দূরে আকালীপুরের মা কালীকে দর্শন করার মত মানুষতো একদমই কম। স্বাভাবিকভাবেই এখনো সেভাবে পর্যটন কেন্দ্র হিসাবে নিজেকে তুলে ধরতে পারেনি আকালীপুর। অথচ শিল্প ও ইতিহাস এখানে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। সেদিনের ঘন জঙ্গল বা ব্রাহ্মনী নদীর স্রোত হয়তো আজ আর নেই কিন্তু মহারাজ নন্দকুমারের গুহ্যকালী আজও সেদিনের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।
| মা কালীর মন্দির, আকালীপুর |
যতদূর জানা যায় ১১৭৮ বঙ্গাব্দের ১১ই মাঘ ( ১৭৭২ খ্রীষ্টাব্দ ) রটন্তী চতুর্দশীতে গ্রামের দক্ষিণে ব্রাহ্মণী নদীর তীরে গুহ্যকালীকে প্রতিষ্ঠা করেন মহারাজ নন্দকুমার। শোনা যায় জরাসন্ধেরও নাকি আরাধিতা ছিলেন এই দেবী।
![]() |
| মা কালী, আকালীপুর |
তবে এই কালীমূর্তির বিশেষত্ব হল আর পাঁচটা অন্য সাধারন কালীমূর্তির থেকে এর গঠন সম্পূর্ণ আলাদা। সেটা আমি আগেই লিখেছি। এই দেবী হলেন ‘সর্পাসীনা সর্পভূষণভূষিতা বরাভয়করা দ্বিভূজা জগন্মাতা শ্রী শ্রী গুহ্যকালী’। বিরল এই মূর্তিটি কালো কষ্টিপাথরে নির্মিত। একটি কালো পাথরের বেদী, তার চারকোণে চারটি সাপ ফণা তুলে রয়েছে। একটি কুন্ডলী পাকানো সাপের উপর মা কালী বসে আছেন। তার ডান পা সাপের মাথার উপর রাখা। তিনি যথার্থই ‘সর্পভূষণভূষিতা’ । ওনার কোমরে সাপের বেষ্টনী। দ্বিভূজা এই মা কালীর হাতে বালার মত যে অলংকার শোভা পাচ্ছে তাও সাপ দিয়েই সাজানো। মা যে মুকুটটি মাথায় দিয়ে আছেন তা সারি সারি সাপের ফণা দিয়ে সাজানো। গলায় নরমুন্ড দিয়ে তৈরী মালা। মা কালীর দুই কান দিয়ে বের হয়ে আসছে নর শিশু। মায়ের দুই হাত এক বিশেষ মুদ্রায় রয়েছে। ইনি একই সাথে ভয়ঙ্কর অথচ ভক্তদের অভয়দান করে চলেছেন। এক অদ্ভুত আকর্ষনী শক্তি আছে এই দেবীর। সম্ভবত মা কালীর এই মূর্তি আর কোথাও নেই।
| মা কালীর মন্দির, আকালীপুর |
আমরা সকালের মধ্যেই সেখানে পৌঁছে যাই। এখানে মায়ের পুজো দেবার মত প্রচুর দোকানপাট নেই। দুই একটি দোকান রয়েছে সেখান থেকেই পুজোর ডালি নিয়ে আমরা পুজো দিলাম। এখানে মায়ের অন্ন ভোগে মাছ থাকে। তবে ভোগ খেতে গেলে আগে থেকে বলতে হয়। এখানে দোকান বাজার কিছুই নেই, তাই আগে থেকেই ব্যবস্থা করতে হয়। আগে থেকে মন্দির কমিটির সাথে যোগাযোগ করলে সুবিধা হয়। আমরা এখানে মায়ের অন্ন ভোগ খাবার সৌভাগ্য অর্জন করলাম। খুব সামান্য টাকার বিনিময়ে এই অভিজ্ঞতা অর্জন করা যায়।
| মা কালী, আকালীপুর |
মন্দির থেকে সামান্য দূরে বয়ে চলেছে
ব্রাহ্মণী নদী। তবে সেই জলধারা এখন আর নেই। তবে নদীর কাছেই প্রাচীন বট গাছটি দেখবার
মত। আকালীপুর গ্রামে প্রবেশমুখেই একটি 'শ্রীরামকৃষ্ণ সারদা সেবাশ্রম' আছে। আমরা ফেরার সময় সেখানে একবার দর্শন করে নিলাম।
| পুরোন বট গাছ, আকালিপুর |
কীভাবে যাবেনঃ হাওড়া বা শিয়ালদহ থেকে ট্রেনে রামপুরহাট যা নলহাটী আসতে হবে। সেখান থেকে গাড়ি ভাড়া করে যাওয়াই সুবিধাজনক। যদি বাসে যেতে হয় তবে ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ধরে এসে নগোরা মোড়ে নামতে হবে। সেখান থেকে ভ্যান পাওয়া যাবে মন্দির যাবার জন্য। রামপুরহাট থেকে আকালীপুরের দুরত্ব ৪০ কিলোমিটার।
কোথায় থাকবেনঃ এখানে রাত্রিবাসের কোন ব্যবস্থা নেই। তার ফিরে এসে নলহাটী বা রামপুরহাটে রাত কাটানোই ভাল।
google map এ আকালীপুরের অবস্থান

Very nice blog! Check out my channel as well : bit.ly/ayanwap7
উত্তরমুছুনVery nice
উত্তরমুছুনNice place to visit
উত্তরমুছুন