ভূ-স্বর্গের ফুল পথে সারাদিন ( GULMARG - THE MEADOWS OF FLOWERS )
| GULMARG, NATURAL FLOWERS ON THE WAY TO GONDALA |
কাশ্মীর এমন একটা জায়গা, কখন যে সেটা পর্যটকদের জন্য “ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর” হয়ে উঠবে তার আগাম হদিস পাওয়া খুব কঠিন। তাই বহু ভ্রমণপ্রিয় মানুষের দেশের বিখ্যাত বিখ্যাত জায়গা দেখা হয়ে গেলেও কাশ্মীরের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র গল্প শুনে ও ছবি দেখেই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে। সেই দিক থেকে আমি নিজেকে ভাগ্যবান মনে করি। আমি ১৯৮৯ সালে ছাত্র অবস্থায় প্রথমবার কাশ্মীর উপত্যকায় বেড়াতে যাবার সুযোগ পেয়েছিলাম। সেবার ভূস্বর্গের শোভা দেখে আমি সত্যি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। তারপরে আবার ২০১১ সালে যাই সপরিবারে। এরপর কয়েকবার জম্মু, পাটনীটপ, সানাসার দেখার সৌভাগ্য হলেও কাশ্মীর উপত্যকায় যাবার সুযোগ আর হয়নি। আমার আজকের গল্প গুলমার্গকে নিয়ে।
মনের মতো ক্যামেরা কিনতে ক্লিক করুন
সময়টা ছিল মে মাস। আমাদের ট্যুর দিন ছয়েকের জন্য। তার থেকেই একটা দিন রাখা ছিল গুলমার্গের জন্য। সকাল থেকেই আমরা স্নান সেরে নিয়ে আলু পরোটা , চাটনী ও মিষ্টি দিয়ে ব্রেকফাস্ট করে রেডি হয়ে বসে আছি। শ্রীনগর থেকে সকাল ৮-৩০ নাগাদ গাড়িতে চেপে বসলাম। ঘন্টা খানেক যাবার পরে পৌঁছালাম ৭২ কিমি দূরে এক অসাধারণ জায়গায়। গাড়ি থেকে নামলাম, জানলাম সেটাই নাকি গুলমার্গ। উচ্চতা ২৭৩০ মিটার। গাড়ির রাস্তা এখানেই শেষ। ড্রাইভার ভাই বললেন - মে মাস বলেই এতদূর আসা গেল। শীতের সময় গাড়ির যাত্রাপথ কমে গিয়ে ৮ কিমি আগে ২৫৩০ মিটার উচ্চতায় টাংমার্গেই শেষ হয়ে যায়। তখন শুধু বরফ আর বরফ।
| GULMARG, CAR STAND AND HOTELS FOR FOOD. |
অসংখ্য গাড়ির ভীড়ে মিশে গিয়ে আমাদের গাড়িটাও একটা সুন্দর জায়গা করে নিল। এই জায়গার আশেপাশে বেশ কয়েকটা ছোট ছোট হোটেল রয়েছে। তারা দুপুরের খাবারের ব্যবস্থা করে চলেছেন। অন্যপাশে ঘোড়াদের একটা বেশ বড়সড় দল, সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। বলা ভাল অপেক্ষা করছে পর্যটকদের পিঠে নিয়ে ঘোরাবার জন্য।
![]() |
| GULMARG, THEME GREEN |
গাড়ি থেকে নামতেই চারপাশে তাকিয়ে চোখ জুড়িয়ে গেল। এক কথায় বলতে হলে একটি সুবিশাল সবুজ ক্যানভাস, তাতে মনমাতানো চোখ জুড়ানো রঙীন ছবি। ছবির থিম সবুজ। চোখের সামনে মখমলের মত সবুজ ঘাসে ঢাকা ঢেউ খেলানো বিশাল ময়দান। স্তব্ধসবুজের ঢেউ কোথাও উঁচু টিলা হয়ে গেছে, কোথাও বা ঢালু হয়ে দৃষ্টির বাইরে চলে গেছে। কোথাও আবার রঙ বেরঙের পাহাড়ি ফুল চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নিজেদের দিকে টেনে নিচ্ছে। আর তা তো হবেই , এতো ফুলেরই উপত্যকা ! ফার্সিতে ‘গুল’ মানে ফুল, আর ‘মার্গ’ মানে ঈশ্বরের পথ। অর্থাৎ সেই অর্থে ‘গুলমার্গ’ মানে ফুলের পথ।
| GULMARG |
| GULMARG, THEME GREEN |
| GONDOLA TICKET COUNTER |
এই প্রসঙ্গে একটা কথা বলি, এই গন্ডোলা যাত্রা প্রথম পর্যায়ের। এটা আমাদের নিয়ে যাবে গুলমার্গ থেকে কঙ্গডোর অবধি। আবার সেখান থেকে ফিরিয়ে আনবে। এই কেবল্কার জম্মু-কাশ্মীর স্টেট কেবল্কার কর্পোরেশন লিমিটেডের অধীনে। প্রথম পর্যায়ে গুলর্মাগের ২৬৯৯ মিটার উচ্চতা থেকে ২.৮ কিমি দূরে ৩০০০ মিটারেরও বেশী উচ্চতায় নিয়ে যায়। সময় লাগে ৮ মিনিট। এই ৮ মিনিট এক স্বর্গীয় ভ্রমণ। গন্ডোলা যত উপরের দিকে উঠছে, নীচের পাইন, দেবদারু গাছের বন, ঘোড়ার দল, স্থানীয় মানুষ সবকিছু চোখের সামনে আস্তে আস্তে ছোট হয়ে যাচ্ছে। সমগ্র উপত্যকা চোখের সামনে এক জায়গায় চলে আসছে। যাত্রা শেষে আমরা নামলাম কঙ্গডোরে। মাটিতে পা দিতেই টিকিটচেকারবাবু আমাদের টিকিটের উপর সময় লিখে দিলেন। অর্থাৎ সেই নির্দিষ্ট সময়ের বেশী উপরে কাটানো যাবে না।
| VIEW FROM GONDOLA , GULMARG |
কঙ্গডোর থেকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনা করা খুব কঠিন। সামনে তুষারশোভিত বিশাল পর্বতের বিস্তার। অপরূপ তার শোভা। কন্কনে হিমেল হাওয়ার পরশ পাহাড়ী সৌন্দর্যের মাত্রা অনেকখানি বাড়িয়ে দিচ্ছে। চোখের আরাম, মনের আরাম এক লহমায় আমাদের শারীরিক ক্লান্তিকে দূর করে দিল। আবার পিছনের দিকে তাকালে নীচে ফেলে আসা গুলমার্গ উপত্যকাকে অপরূপ সুন্দর দেখাচ্ছে। ঠিক যেন আমাদের সমতলের ‘ঝুলন সাজানো’ বলে মনে হচ্ছে। চারদিক তাকালে সত্যিই ‘ভূ-স্বর্গ’ নামের সার্থকতা সহজেই অনুভব করা যায়।
| VIEW OF KONGDOR |
| VIEW OF GONDOLA, GULMARG |
কঙ্গডোর থেকে দ্বিতীয় পর্যায়ের গন্ডোলা যাত্রা এখান থেকেই শুরু হয়। এরা নিয়ে যাবে গুলমার্গ পাহাড়ের মাথায় চিরতুষারের রাজত্বে। কিন্তু আমাদের ভাগ্যে সেটা নেই। এই পরিষেবা এখন বন্ধ। অগত্যা নীচ থেকে চোখে দেখা ছাড়া আর কিছু করার নেই। নীচ থেকে টাওয়ারগুলো পাহাড়ের মাথায় চলে গেছে। মনে হচ্ছে যেন দেশলাই কাঠি দিয়ে কেউ টাওয়ার বানিয়ে সাজিয়ে রেখেছে। অনেকেই ঘোড়ায় চড়ে খিলেনমার্গের দিকে ঘুরতে যাচ্ছেন।
| VIEW OF CABLE CAR PATH |
আমরা নির্দিষ্ট করে দেওয়া সময়ের মধ্যেই আবার গুলমার্গে নেমে এলাম। এবার পেটের টানে হোটেলে আসা। দুপুরের খাবার খেয়ে এবার সবুজ উপত্যকার শোভাকে পায়ে হেঁটে উপভোগ করব। বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু ১৮ পয়েন্টের গলফ কোর্স এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। এছাড়াও সেন্ট মেরিজ চার্চ, রানি মন্দির, মহারাজার প্যালেস ঘুরে দেখা যায়। হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম টিলার মত উঁচু এক জায়গায় মহাদেবের মন্দিরে। সময়ের সাথে সাথে কিছু পরিবর্তন হলেও মূল মন্দির একই রয়েছে। তাই মন্দির প্রাঙ্গনে পা রাখার সাথে সাথে সময় যেন পিছিয়ে গেল কয়েক দশক। এখানেই রাজেশ খান্না ও মমতাজ অভিনীত ‘আপ কি কসম’ ছবির শুটিং হয়েছিল। চোখের সামনে ভেসে উঠল সেই বিখ্যাত দৃশ্য “ জয় জয় শিব শংকর………”।
![]() |
| SHIVA TEMPLE,GULMARG Scene from APP KI KASAM |
| SHIVA TEMPLE GULMARG , at this time |
তবে এখানে এসে অনুভব করলাম- সুন্দর, অপরূপ, অনুপম প্রকৃতির মাঝে ঘড়ির কাঁটা আরো দ্রুত ঘোরে। তাই ওনার সাথে তাল মেলাতে অগত্যা গাড়িতে উঠে বসা। গাড়ি ছুটল ভূ-স্বর্গের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে। মন ভরল না, এ যেন ভরপেট না খেয়েই খাবারের পাত ফেলে উঠে চলে যাওয়া।
শীতের মনোরম গুলমার্গ দেখতে ক্লিক করুন
আরো জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
মনের মতো ক্যামেরা কিনতে ক্লিক করুন



মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন