ভান্ডীরবনের গোপাল মন্দির –যেখানে কৃষ্ণমূর্তি রয়েছে রাধাকে ছাড়াই ( Bhandirban Gopal temple, here Lord Krishna is kept without Lord Radha) )
![]() |
| GOPAL DEV ( LORD KRISHNA ) OF BHANDIRBAN |
বীরভূম জেলার এক অচেনা গ্রাম ভান্ডীরবন। এই গ্রামেই রয়েছে প্রায় ২৫০ বছরের পুরনো গোপাল ( LORD KRISHNA )মন্দির ও শিব মন্দির। এই গ্রাম ও তার মন্দিরকে জানতে হলে আমাদের পিছিয়ে যেতে হবে ১৭৫৪ খ্রীষ্টাব্দে। মুর্শিদাবাদের নবাব তখন আলীবর্দী খাঁ। রামনাথ ভাদুরী ছিলেন তার উচ্চপদস্থ রাজকর্মচারী। ঠিক সেই সময় এই ভান্ডীরবন অঞ্চলের অধিপতি ছিলেন আসদজ্জামান খাঁ। তার প্রচুর খাজনা দেওয়া বাকী থাকায় আলিবর্দী খাঁ রামনাথ ভাদুরীকে এখানকার খাজনা আদায়ের জন্য পাঠান। রামনাথবাবু এখানে আসার পর থেকেই নানান অলৌকিক ঘটনার সাক্ষী হতে থাকেন। শেষ পর্যন্ত শিব মাহাত্মে মুগ্ধ হয়ে এখানকার বহু খাজনা মুকুব করিয়ে দেন। আসদজ্জামানও খুশি হয়ে তাকে ভান্ডীরবন, রাইপুর, বীরসিংহপুর ও আড়াইপুর মৌজা দান করেন। কিন্তু রামনাথবাবু এই জমি নিজে না নিয়ে সেগুলি ভান্ডেশ্বর শিব, গোপালদেব, বীরসিংহপুরের কালীমাতার পুজো, নিত্যসেবা ও ভোগের জন্য উৎসর্গ করেন। শুধু তাই নয় তিনি মুর্শিদাবাদ থেকে কারিগড় আনিয়ে ভান্ডীরবনে গোপাল ও শিবের মন্দির নির্মান করান। জানা যায় বহু আগে এই জায়গা ঘন জংগলে ভর্তি ছিল । এই জংগলেই কঠোর তপস্যায় সিদ্ধিলাভ করেন বিভান্ডকমুনি। সম্ভবত তার নাম অনুসারেই এই স্থান “বিভান্ডকবন” নামে পরিচিত ছিল যা কালক্রমে “ভান্ডীরবন” নামে পরিচিত হয়।
বীরভূমের সদর শহর সিউড়ি থেকে আমজোড়া যাওয়ার পথে মাত্রই ৯ কিমি দূরে এই গ্রাম। প্রথম দিকে শহূরে পরিবেশের মধ্য দিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পরেই গ্রামের নির্ভেজাল প্রকৃতির মধ্য দিয়ে পথ চলতে হবে। বড়চাতুরী স্বাস্থকেন্দ্র পেরিয়ে যেতেই ডান দিকে গোপাল মন্দিরের পথের নির্দেশিকা চোখে পড়ে। ডান দিকে ছায়া ঘেরা গ্রামীন অপরিসর রাস্তা দিয়ে কিছু দূর গিয়ে ভান্ডীরবন গ্রামে পৌঁছানো যায়।
![]() |
| BHANDIRBAN GOPAL TEMPLE, FRONT VIEW |
বেশ প্রাচীন গ্রাম সেটা একটু ঘুরলেই বুঝতে পারা যায়। মূল মন্দিরের সামনে বিশাল প্রশস্ত জায়গা। সামনে একটি প্রাচীন গাছ। মন্দিরের বাইরের প্রাচীর সংলগ্ন এক স্থানে রথ রাখা আছে। মূল প্রবেশদ্বারের উপরে নহবতখানা এখনও প্রাচীনত্বের ছাপ বহন করে চলেছে। দেওয়ালের গায়ে দেব দেবী, জীব জন্তুর প্রতিকৃতি দেখা যায়। এখনো বাতাসে কান পাতলে নহবতের সেই সুর যেন ধরা পড়ে।
![]() |
| GOPAL TEMPLE, NAHABATKHANA |
![]() |
| GOPAL TEMPLE, INSIDE VIEW |
প্রবেশদ্বার পার হতেই নাটমন্দির, কারুকার্যমন্ডিত স্তম্ভের উপর রয়েছে। ডানধারেই সরু চলার পথ দিয়ে কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে উঠতেই মূল মন্দিরের বারান্দায় পৌঁছানো যায়। সামনা সামনি দাঁড়াতেই মনটা শান্ত ভাবে ভরে ওঠে। এক অদৃশ্য আকর্ষনী ক্ষমতা এই মূর্তির। এই গোপালমূর্তির বিশেষত্ব এই যে এনার পাশে কোনো রাধার মূর্তি নেই।চওড়া বারান্দা প্রদক্ষিন করলেই বামদিকের ভোগঘর চোখে পড়ে। সামনে সোনার মন চকচকে ভোগের বাসনপত্র রাখা আছে। গাছপালা সমৃদ্ধ পুরো মন্দির প্রাঙ্গণটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। গোপালদেবের মন্দির থেকেই পিছনের শিবমন্দিরের চূড়া দেখতে পাওয়া যায়।
![]() |
| LORD SHIVA TEMPLE |
![]() |
| The old tree in front of Shiva Temple |
গোপালদেবের মন্দির থেকে ৩০ মিটার দূরে প্রাচীন এই শিব মন্দির। উচ্চতায় প্রায় ১৫০ ফুট হবে। এর নির্মানকাল ১৭৫৪ খ্রীষ্টাব্দের আসে পাশে বলে জানা যায়। প্রবেশপথেই এক অতিবৃদ্ধ বৃক্ষ এখানকার সব ইতিহাসের সাক্ষী হয়ে আজও দাঁড়িয়ে। মূলমন্দিরে বেশ কয়েকটা সিঁড়ি বেয়ে মহাদেবের কাছে যাওয়ার দরজাতে পৌঁছানো যাবে। এখান থেকে দর্শন করা গেলেও একেবারে কাছ থেকে দর্শনের জন্য খান সাতেক সিঁড়ি ভাঙ্গার কষ্ট করতেই হবে। শীতল ও আলো আঁধারে ঘেরা এই গর্ভগৃহ। মন, শরীর শিথিল হয়ে আসে এখানে। এই মহাদেব পশ্চিমলিঙ্গ ।
দুই মন্দিরেই সেবাইতদের সাথে কথা বলা যায় ও ভোগ খাওয়া যায়। পালি করে পুজোর দায়িত্ব নিয়ে আজও এনারা ইতিহাসকে ধরে রেখেছেন।







মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন