Light and Sound show at Sun Temple Konark
UNESCO WORLD HERITAGE এর অন্তর্গত কোণারকের সূর্য মন্দির। পুরীতে বেড়াতে এসেছেন অথচ কোণারক আসেননি এমন মানুষ বোধহয় খুঁজে পাওয়া যাবে না। কোণারকের সূর্যমন্দির নিয়ে আমি আগে লিখেছিলাম। এর পৌরাণিক কাহিনী, ইতিহাস নিয়ে যা কিছু তথ্য পাওয়া যায় তা জেনে নিয়ে মন্দির দর্শন করলে আরো ভাল করে উপভোগ করা যায়। টাইম মেশিনে করে সহজেই পিছিয়ে যাওয়া যায় সেই সময়। অনেকেই সেইভাবে দর্শন করে থাকেন, আমি নিজেও তাই পছন্দ করি। কোণারক নিয়ে আমার আগের লেখা সেইভাবেই লিখবার চেষ্টা করেছিলাম।
এর আগে প্যাকেজ ট্যুরে বিভিন্ন জায়গা দেখার মাঝে সামান্য কিছু সময়ের জন্য সূর্য মন্দির দর্শন করেছি। মেঘলা দিনে, মাঝ দুপুরে সূর্যের আলোতে , সকালের প্রথম আলোতে মন্দির দেখে এসেছি শুধুমাত্র ভাল ছবি তোলার নেশাতে। যতবারই দেখে এসেছি ততবারই মন খারাপ হয়েছে তার আগেরবারের থেকে আরো ভগ্নপ্রায় অবস্থায় মন্দিরকে দেখতে পেয়ে। এবারেও ফেব্রুয়ারী (২০২১) মাসের ভ্রমণে তার ব্যতিক্রম হল না। মন্দির আরো ভগ্নপ্রায়, আরো অনেক অনেক জায়গাতে যাওয়ার বিধি নিষেধ। সমগ্র জায়গাটি সৌন্দর্যের চাদরে ঢেকে ফেলতে গিয়ে কৃত্রিমতার ছাপ ফুটে উঠেছে। আমার এতকথা লেখার একটাই কারণ – যারা এখনো কোণারকের সূর্য মন্দির দেখতে যাননি বা আগে দেখার মতো করে দেখেননি তারা যত তাড়াতাড়ি পারেন দেখে নিন, পরে হয়ত এইটুকু দেখার সুযোগও নাও আসতে পারে। এবারে আমাদের দর্শন করার সময় বিকালের নরম আলোতে। তার প্রধান কারণ সন্ধ্যের মুখে light and sound show দেখার পরিকল্পনা করা আছে। মন্দির (জগমোহন) ও নাটমঞ্চকে পর্দার মত কাজে লাগিয়ে আলোর কারসাজিতে মন্দিরের পৌরাণিক ও ইতিহাসের কথাকে আমাদের সামনে তুলে ধরে এই অনুষ্ঠান ।
আমরা পুরী থেকে দুপুর ৩-৩০ নাগাদ গাড়িতে চেপে বসলাম, কোণারক আসতে সময় লাগল ৫০ মিনিটেরও কম। মূল মন্দির প্রাঙ্গনের গেট থেকে অনেকটা দূরে গাড়ি থেকে নেমে যেতে হল। সেখান থেকে হাঁটতে থাকলাম খানিকটা। দূর থেকেই মন্দির দেখতে পাওয়া যায়। মন্দির দর্শনের জন্য টিকিটের মূল্য চল্লিশ টাকা। light and sound show এর জন্য প্রবেশ মূল্য আলাদা করে পঞ্চাশ টাকা।
![]() |
| এই পথ ধরেই মন্দির প্রাঙ্গনে যেতে হবে |
তবে দুটো বিষয় মাথায় রাখতে হবে –
১) সোমবার এই শো বন্ধ থাকে।
২) শোএর টাইম :: মার্চ থেকে অক্টোবর সন্ধ্যের শো ৭-৩০ থেকে ৮-১০ ও রাতের শো ৮-২০ থেকে ৯-০০ টা।
নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী সন্ধ্যের শো ৬-৩০ থেকে ৭-১০ ও রাতের শো ৭-৩০ থেকে ৮-১০ ।
শো শুরুর আধঘন্টা আগে থেকে টিকিট দেওয়া শুরু হয়। আমরা মন্দির দর্শন করে আবার বাইরে চলে এলাম। এখানে সঠিক সময়ে টিকিট সংগ্রহ করতে হবে, মাথাপিছু ছয়টি টিকিট কাটা যাবে। আমরা যথাসময়ে টিকিট কেটে নিলাম। এবার অন্য একটি গেট দিয়ে আমরা আবার প্রবেশ করলাম মন্দির প্রাঙ্গনে। প্রবেশকালে হাতে হাতে দেওয়া হল একটি করে হেডফোন। আমরা নিজেদের মত করে পছন্দের জায়গায় চেয়ারে বসলাম। ২৫০ জনের একসাথে বসবার ব্যবস্থা আছে। শো শুরু হবার আগে আমাদের প্রত্যেকের হেডফোন নিজের নিজের পছন্দের ভাষাতে সেট করে দিলেন শো কর্তৃপক্ষ। তবে ওড়িয়া, হিন্দী ও ইংরাজীর মধ্যে পছন্দ করতে হল। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি অনেক পরীক্ষার পরে এই light and sound show এর ব্যবস্থা করা সম্ভব হয়েছে। এর জন্য খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা। ওড়িয়া ভাষাতে গলা দিয়েছেন বিজয় মোহান্তী, হিন্দীতে শেখর সুমন ও ইংরাজীতে কবীর বেদী।
![]() |
| এইখান থেকেই বসে দেখতে হয় light and sound show |
যথাসময়ে সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গনের আলো বন্ধ হয়ে গেল। চারদিক নিস্তব্ধ, নীরব। সবাই অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করে চলেছেন। কিছুক্ষনের মধ্যেই জগমোহন ও নৃত্যমন্ডপের উপর আলোর কারসাজি শুরু হল। আমরা মুগ্ধ হয়ে দেখে গেলাম। কিভাবে চল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেল বুঝলাম না। তবে লাইট থাকলেও বাইরে কোথাও সাউন্ড নেই। শব্দদূষণকে রুখে দিল আধুনিক হেডফোন, যার মাধ্যমে আমরা গোটা শো মুগ্ধ হয়ে শুনে গেলাম।
Light and Sound এর কিছু ঝলক
কীভাবে যাবেনঃ কোণারকের নিকটতম বিমান বন্দর ভুবনেশ্বর ( ৬৪ কিমি দূরত্ব )। ভারতের প্রায় সব বড় বড় শহরের সাথে এই বিমানবন্দর যুক্ত। ট্রেনে এলে কাছের রেলস্টেশন পুরী ( ৩৫ কিমি ) ও ভুবনেশ্বর ( ৬২ কিমি )
কোথায় থাকবেনঃ OTDC এর যাত্রীনিবাসে থাকবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



বিস্তারিত বিবরণ ঘোরার জন্য খুবই উপযোগী।খুব সুন্দর।
উত্তরমুছুনEXCELLENT AS USUAL. VERY INFORMATIVE
উত্তরমুছুন