হিমাচলে যাবার প্রস্তুতি নিয়ে কিছু কথা
সময় ভাল আসবেই, আবার স্বাভাবিক হবে জীবন। ভাল দিনের আশা না ছেড়ে প্রস্তুতি নিতে হবে বেড়ানোর। তাই হিমাচলের কয়েকটি জায়গা নিয়ে কিছু কথা।
আয়তনের দিক থেকে ছোট হলেও পর্যটকদের মন জয় করার মতো সব উপকরণই মজুত এখানে। তুষারাবৃত পর্বতশৃঙ্গ, ঘন সবুজ উপত্যকা, মনোরম আপেল বাগানের আকর্ষণ যেমনি আছে, ঠিক তেমনিই রয়েছে আকর্ষনীয় প্রাচীন মন্দির, গীর্জা, বৌদ্ধমঠ, গুরুদ্বার, মিউজিয়াম। অপরূপ নৈসর্গিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি ধর্মপ্রাণ মানুষরা শুধুমাত্র ধর্মীয় টানেই এখানে চলে আসতে পারেন। এমনই এক ছোট্ট রাজ্য হলো উত্তর ভারতের হিমাচল প্রদেশ। দর্শনীয়স্থান হিসাবে নাম লিখতে থাকলে হয়তো হিমাচলের কোন স্থানই বাদ যাবে না, তবুও তারই মধ্যে অতি জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্রগুলির কথা আলাদা করে না বললেই নয়। খুব বড় রাজ্য না হলেও এক যাত্রায় সমগ্র হিমাচল ঘুরে নেওয়া কাগজে কলমে সম্ভব হলেও বাস্তবে প্রায় অসম্ভব। তাই অগণিত দর্শনীয় স্থানের মধ্যে থেকে নিজের সময়, পছন্দ, শারীরিক সক্ষমতা, বেড়ানোর সময়ে সেই জায়গার প্রাকৃতিক অবস্থা বিচার করে নি্জের ট্যুর প্ল্যান বানাতে হবে। তাই হিমাচল প্রদেশ বেড়ানোর জন্য সারা রাজ্যকে কয়েকটা ভাগে ভাগ করে ছোট ছোট ট্যুর প্ল্যান দেওয়া থাকলো।
১) সিমলা-রামপুর-সারাহান-সাংলা-কল্পা
২) সিমলা-কুলু-নাগ্গর-মানালি-মণিকরণ
৩) ডালহৌসি-চাম্বা-ধরমশালা-জ্বালামুখী
৪) লাহূল ও স্পিতি উপত্যকা
![]() |
| হিডিম্বাদেবী মন্দির, মানালি |
১) সিমলা-রামপুর-সারাহান-সাংলা-কল্পা
কীভাবে যাবেন- হাওড়া থেকে কালকা মেল (১২৩১১) সরাসরি কালকা যায়। হাওড়া থেকে কালকার দূরত্ব ১৭৪৩ কিমি। কালকা স্টেশন থেকে টয় ট্রেনে সিমলা। কালকা থেকে সিমলা ৯৬ কিমি পথ। ১০৩টি টানেলসহ এই পথ বড় মনোরম।কালকা থেকে সিমলা প্যাসেঞ্জার, রেল মোটর, শিবালিক এক্সপ্রেস, সিমলা এক্সপ্রেস, হিমালয়ান কুইন ইত্যাদি নানা ট্রেন আছে। এছাড়া সড়ক পথে কালকা থেকে ৯০ কিমি দূরের সিমলা যাওয়া যায়। সিমলা থেকে গাড়ীতে রামপু্র,সারাহান,সাংলা ও কল্পা নিজের পরিকল্পনা মতো ঘুরে নেওয়া ভাল।
![]() |
| কালকা সিমলা রেলপথ |
সিমলা- ২২০০ মিটার উচ্চতা্য় অবস্থিত ওক,পাইন, দেওদারে ছাওয়া সুন্দরী সিমলা হিমাচলের বর্তমান রাজধানী হলেও ১৯৩৯ সাল পর্যন্ত এটি ব্রিটিশ সরকারের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী ছিলো। তাই স্বাভাবিকভাবেই এখানে ব্রিটিশ স্থাপত্যের প্রচুর নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে। শৈলাবাসে আপার, মিডল ও লোয়ার ম্যাল থাকলেও সাজানো গোছানো আপার ম্যাল পর্যটকদের প্রথম পছন্দ। এখনে কোন যানবাহন চলে না তাই হেঁটে ঘোরার মজাটাই আলাদা। আপার ম্যলের স্ক্যাণ্ডেল পয়েণ্ট থেকে নানা দিকে রাস্তা গিয়েছে।এখানেই আছে ১৮৫৭ সালে তৈরী ক্রাইস্টচার্চ, পাশেই রয়েছে গেইটি থিয়েটার। এছাড়াও দেখে নেওয়া যায় বাঙালীদের অত্যন্ত প্রিয় সিমলা কালীবাড়ী, বিধানসভা, চৌরা ময়দান, স্টেট মিউজিয়াম ও ভাইসরিগ্যাল লজ যা বর্তমানে ইনস্টিটিউট অব অ্যাডভান্সড স্টাডিজ।সিমলার সর্বোচ্চ স্থান জাখু হিলসের চূড়া থেকে তুষারাবৃত গিরিশঙ্গের শোভা খুব মনোরম। আলাদা করে রাত্রিবাস না করলেও সিমলা থেকে কুফরি, চেইল ঘুরে আসা যায়। সিমলা থেকে কুফ্রি হয়ে চেইলের দূরত্ব ৪৩ কিমি।
কোথায় থাকবেন – সিমলা কালীবাড়ি (০৯৮১৬-২৭০৫৩), আরো জানার জন্য লেখার শেষে লিঙ্কে ক্লিক করুন।
![]() |
| পদম প্যালেস, রামপুর |
রামপুর – শতদ্রু নদীর তীরে অবস্থিত প্রাচীন এই শহর একসময় ছিল বুশাহার রাজাদের রাজধানী। রাস্তার পাশেই ১৯ শতকে বানানো অসাধারণ পদমপ্রাসাদটি এখানকার মূল আকর্ষণ। এছাড়াও বৌদ্ধমন্দির, নরসিংহ মন্দির, দেখে নেওয়া যায়।সিমলা থেকে সারাহান যাওয়ার পথে রামপুরে দর্শনীয় স্থান দেখে সারাহানে রাত্রিবাস করাই ভালো।
![]() |
| ভীমাকালী মন্দির, সারাহান |
সারাহান – ২১৬৫ মিটার উচ্চতায় কিন্নরের এক নির্জন গ্রাম সারাহান।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই এখানকার সম্পদ। আপেল বাগানের জন্য বিখ্যাত এই গ্রাম। অপরূপ নৈসর্গিক শোভা ছাড়াও এখানকার অন্যতম দ্রষ্টব্য ৫১ পীঠের অন্যতম ভীমাকালী মন্দির। কথিত সতীর কান পড়েছিলো এখানে। মন্দিরের গা কাঠ ও পাথরের অপরূপ কারুকার্যে শোভিত। এছাড়াও দেখে নেওয়া যায় বুশাহার রাজাদের প্রাসাদ। শীতকালে সমস্ত জায়গা বরফের নীচে চলে যায়। এখানকার সর্বোচ্চ স্থান সারাহান পক্ষী বিহার। এখানে পাখি দেখা ছাড়াও এই জায়গা থেকে তুষারশৃঙ্গের অপরূপ শোভা দেখে নেওয়া যায়।
![]() |
| সাংলা উপত্যকা |
সাংলা – ২৬৮০ মিটার উচ্চতায় কিন্নরের এই উপত্যকার সৌন্দর্য অতি মনোরম।বসপা নদী বয়ে চলেছে এই উপত্যকার উপর দিয়ে। পুরো উপত্যকায় আপেলের বাগান শোভা পায়। সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে যখন সমস্ত আপেল গাছ আপেলে ভর্তি হয়ে থাকে , তখন তার শোভা অসাধারণ।নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এর সম্পদ হলেও এখানকার কিন্নরী স্থাপত্যকলায় তৈরী গ্রামের বাড়ী, পাঁচতলা টাওয়ার সদৃশ কামরু দুর্গ, বেরিনাগ মন্দির, বৌদ্ধ মন্দির কিছু কম আকর্ষনীয় নয়। এছাড়া সাংলা থেকে ঘুরে আসা যায় ১৭ কিমি দূরের রকছম গ্রাম। ৩১১৫ মিটার উঁচুতে অবস্থিত এই গ্রাম যেন সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। এখান থেকে আরো ৭ কিমি দূরে তিব্বত সীমান্তে ভারতের শেষ গ্রাম ছিটকুল। ৩৪৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই গ্রামের মধ্য দিয়ে বয়ে চলেছে বসপা নদী। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এখানকার শিব মন্দিরটি দর্শনীয়। নভেম্বর থেকে এপ্রিল মাস এই গ্রাম বরফের তলায় চলে যায়।
কল্পাঃ ২৯৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কল্পা কিন্নরের আরো একটি সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। কিন্নর কৈলাস সহ হিমালয়ের অন্যান্য তুষারাবৃত গিরিশৃঙ্গ এখানে খুব কাছে থেকে দেখা যায়। এছাড়া আপেলবাগান সমৃদ্ধ এই জায়গা সহজেই মন কাড়ে পর্যটকদের। পূর্বে কল্পা ছিল কিন্নরের জেলা সদর, বর্তমানে তা বদলে ১০কিমি দূরের রেকংপিও-তে স্থানান্তরিত হয়েছে।সাংলা থেকে কল্পা আসার পথে রেকংপিও-এর অবস্থান। এখানকার মনাস্ট্রি ও চন্ডিকামাতার মন্দির দর্শনীয়।এছাড়া লাগোয়া কোটি গ্রামে কোটিমাতা দর্শন করে নেওয়া যেতে পারে।কল্পা গ্রামের পিছনে রয়েছে নারায়ণ নাগিনি মন্দির। এই মন্দিরের কাঠের কাজ দেখবার মতো।শুধুমাত্র মন্দির নয় এখানকার প্রাচীন গ্রামগুলিতে কাঠের কারুকার্য নজর কাড়ার মতো।
প্রয়োজনীয় তথ্য- দূরত্ব সিমলা থেকে সারাহান ১৮০ কিমি
সারাহান থেকে সাংলা ১০৫ কিমি
সাংলা থেকে কল্পা ৫১ কিমি
কল্পা থেকে কালকা ৩৬২ কিমি
কেনাকাটা ও স্থানীয় খাবার – সিমলাসহ সমগ্র কিন্নর বিখ্যাত তার হাতে তৈরী শাল, টুপি, মাফলার ও খোদাই করা কাঠের কাজের জন্য।তাই শীতবস্ত্র ও নানান কাঠের তৈরী জিনিষ কেনা যেতে পারে।স্থানীয় খাবার বলতে সেপ্টেম্বর অক্টোবর মাসে গাছের আপেল। এছাড়া এখানে অ্যলমন্ড,এপ্রিকট হয়।
কীভাবে যাবেন- সিমলা থেকে যাত্রা শুরু করলে হিমাচল ট্যুরিজমের বাসে বা গাড়ী ভাড়া করে কুলু ,মা্নালি আসা যেতে পারে।
কুলু- সিমলা থেকে কুলু যাওয়ার পথের সৌন্দর্য্য দেখে চোখ জুড়িয়ে যায় যখন বিপাশা নদী পাশে চলে আসে।কুলু উপত্যকাকে বলা হয় ‘ভ্যালি অব গডস্’।এই উপত্যকাকে ঘিরে রয়েছে তুষারাবৃত পর্বতমালা।সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে আপেলে ভরা আপেল বাগানের শোভা কুলুর সৌন্দর্যকে বহু গুন বাড়িয়ে তোলে। কুলুর নিজস্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্য থাকলেও কুলুর ঢোলপুর ময়দানকে ঘিরেই সব কিছু। এই ময়দানেই দশেরা উপলক্ষে বিশ্ববিখ্যাত মেলা বসে। সপ্তুদশ শতকে নির্মিত এখানকার রঘনাথজির মন্দির বিখ্যাত।রঘুনাথজি হলেন কুলু্রাজাদের কুলদেবতা।
নাগ্গর- কুলু থেকে এগিয়ে বিপাশা নদীর পূর্ব তীর ধরে এগোলে পৌছানো যাবে নাগ্গর।১৭৬০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নাগ্গর ছিল কুলুর রাজধানী । ১১শতকে গুর্জর-প্রতিহার রাজাদের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা গৌরীশঙ্কর মন্দির ও প্যাগোডা আকৃতির ত্রিপুরাসুন্দরী মন্দির এখানকার বিশেষ দ্রষ্টব্য স্থান। তবে ১৬শতকে রাজা সিধ সিংহের তৈরী নাগ্গর প্রসাদের কিছু অংশ হিমাচল ট্যুরিজমের হোটেল ও মিউজিয়াম হিসাবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
![]() |
| বিপাশা নদী, মানালী |
মানালি- বিপাসা ও মানালসু নদীর তীরে পাইন, দেবদারু ঘেরা এই শৈলশহর ২০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। ভারতবর্ষের সেরা ও জনপ্রিয়তম শৈলশহরগুলির মধ্যে মানালি একটা। এখানকার প্রাকৃতিক শোভা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়।তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখার পাশাপাশি কয়েকটি দেখবার মতো মন্দিরও আছে। তার মধ্যে বিখ্যাত হল হিড়িম্বা মন্দির। ১৫৫৩ সালে মহারাজা বাহাদুর সিং এই অপূর্ব প্যাগোডাধর্ম্মী মন্দিরটি তৈরী করান।মহাভারতের ভীমপত্নী হিড়িম্বার নামে তৈরী এই মন্দিরের গর্ভগৃহে পাথরের উপর দুটি পায়ের ছাপ আছে যা হিড়িম্বার বলেই মানুষের বিশ্বাস। অনতিদূরে রয়েছে ভীমপুত্র ঘটোৎকচ মন্দির। এছাড়া পুরনো মানালি গ্রামের মনু মন্দির, মানালসু নদীর ধারে ক্লাব হাউস দেখবার মতো। অন্যান্য শৈলশহরের ম্যালের মতো মানালির ম্যালও অত্যন্ত জনপ্রিয় ও জমজমাট। রেস্তোরা, লজ, নানান দোকানপাট মিলিয়ে জমে ওঠা ম্যাল ঘুরতে ভালোই লাগে।
![]() |
| সোলাং উপত্যকা, মানালী |
মানালি থেকে হিমাচল ট্যুরিজমের কন্ডাক্টেড ট্যুর বা নিজের গাড়ীতে ঘুরে আসা যাবে রোটাংপাস ও সোলাং ভ্যালি।মানালি থেকে ৫১ কিমি দূরে ৩৯৭৮ মিটার উঁচু রোটাং পাসে পোঁছে পর্যটকরা প্রকৃতির শোভা দেখে মোহিত হয়ে যান।বরফের এই রাজ্যে সকলে বরফ নিয়ে খেলায় মেতে ওঠেন।
![]() |
| মণিকরণ, হিমাচল |
মণিকরণ- আলাদা করে রাত্রিবাস না করেও মানালি থেকে সারাদিনের ট্যুরে ঘুরে আসা যায় মণিকরণ। ১৭৩৭ মিটার উচ্চতায় হিমশীতল এই জায়গাতে উষ্ণকুণ্ডের জল এতটাই গরম যে চাল ডুবিয়ে রাখলে ভাতে পরিণত হয় সহজেই। শিবপার্বতীর মন্দির আছে । এইস্থানের সাথে এক পৌরাণিক কাহিনী জড়িত থাকায় হিন্দুদের কাছে অতি পবিত্র তীর্থক্ষেত্র এটি।আবার অন্যদিকে শিখদের কাছেও অত্যন্ত পবিত্র এই জায়গা। ১৫৭৪ সালে গুরুনানক এখানে কিছুদিন কাটিয়ে গিয়েছিলেন। গুরুনানকের চরণ স্পর্শ করা এই জায়গায় একটি বিরাট গুরুদ্বার গড়ে উঠেছে।সেখানে সারদিন থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা আছে একেবারে বিনা পয়সায়। এখানকার উষ্ণ জলে স্নানের ব্যবস্থাও করা আছে।
কোথায় থাকবেন – গুরুদ্বারেতে থাকবার ব্যবস্থা আছে।
কেনাকাটা ও স্থানীয় খাবার – কুলুতে কুলু শাল, সোয়েটার, টুপি, মাফলার এবং মানালিতে নানান শীতবস্ত্র কিনবার মতো। স্থানীয় খাবার হিসাবে সুস্বাদু ফল আপেল খেয়ে শখ মেটানো যায়। মানালিতে ট্রাউট মাছের বিভিন্ন পদ, আপেলের চাটনি চেখে দেখতে ক্ষতি নেই।
প্রয়োজনীয় তথ্য – দূরত্ব সিমলা থেকে মানালি ২৬৫ কিমি
চন্ডীগড় থেকে মানালি ৩২৫ কিমি
কুলু থেকে মানালি ৪০ কিমি
কুলু থেকে নাগ্গর ২৭ কিমি
মানালি থেকে মণিকরণ ৮৫ কিমি
কীভাবে যাবেন – মঙ্গল, শুক্র, শনি হাওড়া থেকে হিমগিরি এক্সপ্রেস(১২৩৩১) ও কলকাতা থেকে জম্মুতাওয়াই এক্সপ্রেসে ( ১৩১৫১ ) এলে সরাসরি পাঠানকোটে আসা যাবে। পাঠানকোট থেকে সহজেই বাসে বা গাড়ীতে ৮৫ কি্মি দূরের ডালহৌসি যাওয়া যায়। ডালহৌসি থেকে কন্ডাক্টেড ট্যুরে খাজিয়ার ও চাম্বা ঘুরে আসা যায়। ট্রেনে হাওড়া থেকে পাঠানকোট ১৯২১ কিমি।
ডালহৌসিঃ ২০৩৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত ব্রিটিশ আমলের এই শহর বালুন, কাথলোগ, বাক্রোতা, পেট্রেন ও তেহেরা নামে পাঁচটি পাহাড় দিয়ে ঘেরা। ডালহৌসির গান্ধিচক ও সুভাষচক দুটি জমজমাট জায়গা। একটু চড়াই হলেও সবুজে সাজানো এই শহরের ম্যাল রোডে হাঁটতে ভালোই লাগে। শীতে প্রচুর তুষারপাত হয় এই শহরে। সাহেবী মেজাজের এই শহরের একটু বাইরের দিকে পঞ্চপুল্লা জলপ্রপাত ও সাতধারা দেখবার মতো। এছাড়া কালাটপ অভয়ারণ্য দেখে নেওয়া যেতে পারে। আলাদা করে রাত্রিবাস না করেও কন্ডাক্টেড ট্যুরে ডালহৌসি থেকে খাজিয়ার,চাম্বা ঘুরে আসা যায়।
![]() |
| খাজিয়ার উপত্যকা |
খাজিয়ারঃ ১৯৫১ মিটার উঁচুতে খাজিয়ার যেন থিম সবুজ,এক বিশাল সবুজ তৃণভূমি চারদিক থেকে চালু হয়ে নেমে এসেছে।তাকে ঘিরে রয়েছে পাইন ও দেওদারের ঘন সবুজ প্রাচীর মাঝে জলাশয়। খাজিয়ারে ১২ শতকে তৈরী খাজিয়ানাগের মন্দিরটি দেখবার মতো। এই জায়গা ভারতের সুইজারল্যান্ড নামে পরিচিত।ঘোড়ায় চড়ে পুরো উপত্যকাটি ঘুরে দেখতে ভালই লাগবে।
চাম্বাঃ ইরাবতী নদীর ধারে ৯২৬ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই চাম্বা শহর অতি প্রাচীন। এই উপত্যকাকে বলা হয় ‘ভ্যালি অব মিল্ক অ্যান্ড হানি’। এখানকার রাজকন্যা চম্পাবতীর নাম অনুসারে এই জায়গার নাম চাম্বা। পাহাড়, নদী মিলিয়ে এখানকার নৈসর্গিক শোভাও মনোরম। চৌগান ময়দানকে কেন্দ্র করে চাম্বা গড়ে উঠেছে। এখানকার দর্শনীয় স্থান বলতে হরিরাই মন্দির, ভুরি সিং মিউজিয়াম, লক্ষ্মী-নারায়ণ মন্দির কমপ্লেক্স ও পাহাড়ের মাথায় চামুন্ডা মন্দির। ১১ শতকের হরিরাই মন্দিরে চতুর্মুখ বিষ্ণুমূর্তি দেখবার মতো।
ধরমশালাঃ ধৌলাধার পর্বতমালা বেস্টিত এই পর্যটন কেন্দ্রের দুটি ভাগ লোয়ার ধরমশালা, আপার ধরমশালা। দুই ধরমশালার মধ্যে উচ্চতায় যেমন পার্থক্য আছে তেমন দূরত্ব অনেকটা।আপার ধরমশালা ম্যাকলয়েডগঞ্জ নামে খ্যাত। এখানেই পর্যটকরা বেশী থাকতে পছন্দ করেন। এখানেই বসবাস করেন দলাইলামা তাই এই জায়গা ‘লিটিল লাসা’ নামে পরিচিত। এখানকার নামগিয়াল মনাস্ট্রি দেখবার মতো।এখানে বুদ্ধদেব ছাড়াও পদ্মসম্ভবের মূর্তি আছে।ম্যাকলয়েডগঞ্জ এর আরো উপরের দিকের নাম ভাগসুনাগ।এখানে একটু দূরেই শিবমন্দির। এখানকার উষ্ণ জলের প্রস্রবণটি বেশ আকর্ষণীয়। এখানকার অন্যান্য দর্শনীয় স্থানগুলির মধ্যে দেওদার বনের মাঝে ডাললে্ক ও নাড্ডিপয়েন্ট উল্লেখযোগ্য।ধরমশালা থেকে ১৮ কিমি দূরের কাংড়া্তে কাংড়া উপত্যকা ও ব্র্জেশ্বরীদেবীর মন্দির দর্শন করে আসা যায়। অন্যদিকে ধরমশালাকে কেন্দ্র করে ৫৪ কিমি দূরের জ্বালামুখী দর্শন করে নেওয়া যায়। এটি একটি সতীপীঠস্থান। গর্ভগৃহে অনন্তকাল ধরে জ্বলে থাকা অগ্নিশিখা দেবীরূপে পূজিত হন। আরো সময় হাতে থাকলে ২৫ কিমি দূরের ধৌলাধারের কোলে মনোরম শহর পালামপুর ঘুরে আসা যেতে পারে। এখানকার চা বাগানের শোভায় মুগ্ধ হয়ে যান পর্যটকেরা।
কেনাকাটা ও স্থানীয় খাবার – আপার ধরমশালাতে তিব্বতীয় হ্যাণ্ডিক্র্যাফট্স এর দোকান থেকে কেনাকাটা করা যেতে পারে, চাম্বাতে চামড়ার তৈরী জিনিষপত্র সংগ্রহে রাখতে পারে্ন। স্থানীয় খাবার চেখে দেখার জন্য ধরমশালাতে খাঁটি তিব্বতীয় খাবারের স্বাদ নিতে পারেন।এছাড়া আপেলের দেশে আপেলের রসের স্বাদ নিতে ভুলবেন না।
প্রয়োজনীয় তথ্য – দূরত্ব ডালহৌসি – খাজিয়ার ২২ কিমি
ডালহৌসি – চাম্বা ৪৭ কিমি
ডালহৌসি – ধরমশালা ১৩০ কিমি
পাঠানকোট – ডালহৌসি ৮৫ কিমি ; পাঠানকোট – ধরমশালা ৯০ কিমি
৪) স্পিতি ও লাহুল
কীভাবে যাবেন – অনেকে কিন্নর বেড়িয়ে স্পিতি ও লাহুল ঘুরে মানালি পৌঁছে যান। মানালি থেকে চন্ডীগড় হয়ে কলকাতাইয় ফেরত আসা যায়। আবার অনেকে মানালি থেকেও যাত্রা শুরু করে লাহুল স্পিতি দেখে কিন্নর পৌঁছে যান।
![]() |
| নাকো লেক |
নাকো- কল্পা থেকে স্পিতির দিকে যতই এগিয়ে যাওয়া যায় সবুজ হিমালয় ততই রুক্ষ রূপ পেতে থাকে। কল্পা থেকে ১০৯ কিমি দূরে ২৯৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত নাকো গ্রাম। এরপরেই কিন্নর শেষ, স্পিতি শুরু।প্রাকৃতিক সৌন্দর্যই নাকোর সম্পদ। নাকো হ্রদ এখানকার আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু।চারদিক তুষারাবৃত পর্বতমালা দিয়ে ঘেরা এই জায়গা। হ্রদের জলে বরফমোড়া পর্বতমালার প্রতিবিম্ব এর সৌন্দর্যকে আরো বাড়িয়ে তোলে। এছাড়া নাকো গুম্ফাতে রয়েছে নানান স্টাকো বিগ্রহ ও ম্যুরাল। এখানে প্রাচীন গুম্ফাটিতে যে পদচিহ্ন সংরক্ষিত রয়েছে সেটা গুরু পদ্মসম্ভবের বলে মানুষের বিশ্বাস।
![]() |
| টাবো গ্রাম, হিমাচল |
টাবো – নাকো থেকে টাবো ৬৪ কিমি। পথে সামধো-তে কিন্নর শেষ, স্পিতি শুরু। পুরো রাস্তাটিতে ক্ষয়ে যাওয়া পাহাড়ের পাথরগুলি নানান প্রাকৃতিক রূপ দিয়েছে, তার সৌন্দর্য অপরূপ।চারদিক পাহাড়া ঘেরা টাবোর সৌন্দর্য মন ভরিয়ে দেয়। টাবোর প্রধান আকর্ষণ তার হাজার বছরের প্রাচীন গুম্ফা। ৩০৫০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই টাবো গুম্ফা ৯৯৬ সালে তৈরী হয়েছিলো। অপরূপ দেওয়াল চিত্রের জন্য এই গুম্ফা ‘হিমালয়ের অজন্তা’ নামেও পরিচিত।এই গুম্ফায় তিব্বতীয় শৈলীর নানান চিত্র, মূর্তি সংরক্ষিত আছে। বর্তমানে এই গুম্ফা ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত।
কোথায় থাকবেন –
টাবো মনাস্ট্রিতে থাকবার ব্যবস্থা আছে।
কাজা- টাবো থেকে কাজা যাওয়ার পথটি অত্যন্ত মনোরম। পথে ধাংকার দুর্গ ও গুম্ফা দেখবার মতো। ৩৮৯০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত এই দুর্গ। টাবো থেকে কাজা ৫২ কিমি। এই পথে সঙ্গী হয় স্পিতি নদী। ৩৬০০ মিটার উচ্চতায় অবস্থিত কাজা হলো স্পিতি সাব ডিভিসনের সদর শহর।কাজার অন্যতম আকর্ষণ কাজা থেকে ১২ কিমি দূরের কি-গুম্ফা। ৪১১৬ মিটার উচ্চতায় থাকা এই গুম্ফাতে তিব্বতি দেবদেবী, তিব্বতি ধর্মগ্রন্থ ‘গিলুবা’, রকমারী দেওয়াল চিত্র দেখে মুগ্ধ হয়ে যেতে হয়। নভেম্বরের পর থেকেই এই গ্রাম বরফের তলায় চলে যায়।
কেলং – কাজা থেকে ১৮৭ কিমি দূরে অবস্থিত লাহুলের সদর শহর কেলং। এই পথ ধরে চলার সময়ই পার হতে হয় কুন্জুম পাস। ৪৫৫১ মিটার উচ্চতার এই পাসে স্বর্গীয় সৌন্দর্যের ছোঁয়া পাওয়া যায়। এখান থেকে বড় শিগরি, ছোট শিগরি হিমবাহ ও চন্দ্রভাগাসহ অসংখ্য বরফমোড়া শৃঙ্গের দৃশ্য মন ভরিয়ে দেয়। ৩৩৫০ মিটার উচ্চতায় থাকা কেলং এর অন্যান্য দেখবার জায়গা হলো ৬ কিমি দূরের খারদাং মঠ। একটু দূরে উদেপুর ও ত্রিলোকনাথের মন্দির। লাহুল উপত্যকা রুক্ষ, বৃক্ষহীন হলেও কেলং- এ কিছু পপলার ও উইলো গাছ দেখতে পাওয়া ।কেলং এর অবস্থান এমনই যে চারদিক তুষারমকুট আবৃত পর্বতমালা দিয়ে বেষ্টিত। এখান থেকে ‘লেডি অব কেলং’ শৃঙ্গের শোভা সকলের মন জয় করে নেয়। দর্শনের পর কেলং থেকে রোটাং পাস হয়ে মানালি আসতে হবে। এই পথের দূরত্ব ১১৫ কিমি।
কেনাকাটা ও স্থানীয় খাবার – কেলং –এ স্থানীয়ভাবে তৈরী কার্পেট, খাঁটি উলের তৈরী শীতবস্ত্র কেনার ভালো দোকান আছে।এছাড়া অনেক তিব্বতী দোকান আছে যেখানে চিনে তৈরী সিরামিক বাসনপত্র, দামী পাথর, রত্ন পাওয়া যায়। এখানে ফলের রসের স্বাদ নেওয়া যেতে পারে।
কিভাবে যাবেন জানার জন্য ক্লিক করুন
হিমাচলে কোথায় থাকবেন জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন
ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত











Nut shell e sara Himachal bornona aswadharon 👌👌👌👌
উত্তরমুছুনDharamsala theke Baijnath ghure asa jai.Eti Dwadas Jyotirlinger modhye ekti.
উত্তরমুছুনthanks for this travel tips
মুছুন