আপনি কি জানেন ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ইমামবাড়া কোথায় ???

                 

NIZAMAT IMAMBARA, MURSHIDABAD, INDIA
Nizamat Imambara, Murshidabad

                        স্বাধীন বাংলার শেষ রাজধানী মুর্শিদাবাদ ভাগীরথী নদীর ধারে অবস্থিত এই শহর থেকে ইংরেজরা ১৭৭৩ সালে কলকাতাতে বাংলার রাজধানী স্থানান্তরিত করে প্রাচীন স্থাপত্যে সাজানো এই ঐতিহাসিক শহর বর্তমানে দু-তিন দিনের ভ্রমণের জন্য আদর্শ স্থান খুব কম মানুষ আছেন যিনি মুর্শিদাবাদের কোন না কোন বিখ্যাত সৌধ এখনো দর্শন করেন নি অনেকে একদিনের জন্য বনভোজনে গিয়েও হাজারদুয়ারী দেখে এসেছেন কিন্তু আমরা যে সৌধগুলো দেখি সবগুলো ইতিহাস আমরা সবাই জানিনা অনেকগুলি আবার আসল সৌধ ভেঙে যাবার পরে  নতুন করে তৈরী !!  খুব অবাক লাগছে না ?   

                   নিজামত ফোর্ট ক্যাম্পাসে  হাজারদুয়ারী দেখতে গিয়ে আমরা ঠিক তার সামনেই সাদা রঙের নিজামত ইমামবাড়া, এছাড়াও বাচ্চেওয়ালি কামান, ওয়াসিফ মঞ্জিল, ঘড়ি ঘর দেখতে পাই ইমামবাড়াকে আমরা বেশীরভাগ সময়ই বন্ধ অবস্থায় থাকতেই দেখি এই ইমামবাড়া শুধু বাংলার নয় সম্ভবত ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ইমামবাড়া, একথা আমরা অনেকেই জানি না আজকে এই নিজামত ইমামবাড়ার অজানা দিকের কিছু কথা বলব     

                     এখন যে নতুন নিজামত ইমামবাড়া আমরা দেখি তার আগে আর একটি নিজামত ইমামবাড়া ছিল সেই ইমামবাড়া নবাব সিরাজ-উদ-দৌলা নির্মাণ করেন নির্মাণ করেন বললাম কারণ ভিত্তি স্থাপনের সময় তিনি নিজে হাত লাগিয়েছিলেন নবাবের এই ইমামবাড়া নিয়ে এতটাই ভাবনা ছিল যে তিনি জায়গাটিতে ফুট গভীর করে খনন করান মক্কা থেকে মাটি এনে সেই স্থান ভরাট করিয়ে ইমামবাড়া নির্মাণ করান মূল উদ্দেশ্য ছিল গরীব ধর্মপ্রাণ মুসলিম প্রজারা  মক্কাতে হজ করতে যেতে না পারলেও তার কিছুটা স্বাদ যাতে এখানে মেটাতে পারেন  

                  সিরাজের তৈরী এই ইমামবাড়া মূলত কাঠ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল দুর্ভাগ্যের বিষয় দু-দুবার আগুন লেগে এটি ধ্বংস হয়ে যায় ১৮৪২ সালে প্রথমবার আগুনে অল্প ক্ষয়ক্ষতি হলেও ১৮৪৬ সালের ২৩শে ডিসেম্বর মাঝ রাতে আগুন লেগে এটি সম্পূর্ণরূপে বিনষ্ট হয়ে যায় শুধুমাত্র মদিনা মসজিদ কোন রকমে রক্ষা পেয়েছিল

                    আমরা এখন যে নতুন নিজামত ইমামবাড়া দেখতে পাই সেটি পুরনো ইমামবাড়ার স্থলে ১৮৪৭ সালে নির্মাণ করান নবাব নাজিম মনসুর আলি খান ফিরাদুন জা মাত্র ১১ মাস সময় নিয়ে দিন রাত কাজ করে স্থপতিরা ভারতবর্ষের সবচেয়ে বড় ইমামবাড়া প্রস্তুত করে দেন সেই সময় এটা নির্মাণ করতে খরচ হয়েছিল লক্ষ স্বর্ণ মুদ্রা নতুন এই ইমামবাড়া হাজারদুয়ারী রাজপ্রাসাদের একদম সামনে ভাগীরথী নদীর তীরে অবস্থিত ৬৮০ ফুট লম্বা নতুন এই ইমামবাড়া তিনভাগে বিভক্ত মাঝে মদিনা মসজিদ মেম্বারদালান, পশ্চিমদিকে দ্বিতল মসজিদ পূর্বে নহবতখানা  

 

Nizamat Imambara, Murshidabad, india
Nizamat Imambara, Murshudabad

 

                      মাঝে মদিনা মসজিদের পাশে মেম্বার দালান আসলে ভক্তদের জমায়েত হওয়ার স্থান আবার অন্যদিকে যাতায়াতের পথ। এখানে অন্ত্যোষ্টি গাথা গাওয়ার জন্য আলাদা জায়গা করা আছে। মেম্বারদালান ও পাশে থাকা বারান্দাটি মার্বেল দিয়ে তৈরী। মদিনা মসজিদ ও মেম্বারদালানের মাঝে রুপোর তৈরীমুখের ঝর্ণার ব্যবস্থা ছিল। সেটা চালু করা হত অন্ত্যোষ্টি গাথা সমাপ্ত হওয়ার পরেই। ইমামবাড়ার পশ্চিমদিকে যে অংশে মসজিদ আছে তার প্রশস্ত মেঝে  মার্বেল দিয়ে তৈরী। এই মসজিদের অন্যতম আকর্ষন হল চোখজুড়ানো ঝাড়লন্ঠন ও অন্যান্য নানান দ্রব্য। এগুলোর বেশীরভাগই নবাবেরা উপহার পেয়েছিলেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর থেকে।

 কিভাবে যাবেনঃ  নিজামত ইমামবাড়ার নিকটতম রেলস্টেশন মুর্শিদাবাদ। হাওড়া ও শিয়ালদহ থেকে সরাসরি মুর্শিদাবাদ আসার অনেক ট্রেন আছে। সড়ক পথেও কলকাতা, বর্ধমান , রামপুরহাট, সিউড়ি, সাঁইথিয়া থেকে বহরমপুরের যোগাযোগ আছে। আবার উত্তরবঙ্গ থেকেও ৩৪ নং জাতীয় সড়ক হয়ে এখানে আসার ব্যবস্থা আছে।

কোথায় থাকবেনঃ  পশ্চিমবঙ্গ সরকারের WBTDCL এর বহরমপুরের টুরিষ্ট লজ বুক করতে পারেন। সরাসরি বুক করার জন্য  এখানে ক্লিক করুন 

 

মন্তব্যসমূহ

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন