মসলা বাগানের টানে ( Spices Garden of God's own country )
কেরলকে “ঈশ্বরের আপন দেশ” বলা হয় ! সত্যিই তাই, তবে আমার আজকের লেখাতে আমি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের কোন বর্ণনা দেব না। সেটা ছাড়াও আমাকে মুগ্ধ ও আকৃষ্ট করেছে এখানকার উদ্ভিদের রোগ নিরাময় ক্ষমতা, তার সাথে এখানকার উন্নতমানের মসলার বাগান ( spices plant )। যা ঈশ্বরের দান ছাড়া সম্ভব নয়। তিরুবনন্তপুরমে পা দেবার পরে এতসব কিছু বুঝতে পারিনি। সেখানে পদ্মনাভস্বামী মন্দির, কোভালাম, ভারকালা সৈকতের সৌন্দর্যে মেতে ছিলাম। যেদিন আমরা কোভালাম থেকে আলেপ্পি এলাম, সেদিন হঠাৎ করে দরকার হল মাথা ব্যাথার ওষুধের। ওষুধ কিনতে গেলাম কাছেই এক ওষুধের দোকানে। সেইখানেই পেলাম মাথা ব্যাথা উপশমের জন্য একটা ছোট্ট শিশিতে ওষুধ, যা কিনা এখানকার গাছ গাছড়া থেকেই তৈরী। ব্যবহার করে বুঝলাম সত্যিই ঈশ্বরের দান।
এরপরে আমাদের ট্যুর যত এগোতে থাকে, ততই পরিচিত হতে থাকি নানান ধরনের ওষুধ, প্রসাধনী সামগ্রীর সাথে, যা কিনা এখানকার উদ্ভিদের দান। আলেপ্পি থেকে চলে এলাম কুমেলিতে, সেখানেই রাত্রিবাস। পরের দিন সকাল থেকেই হবে পেরিয়ার লেকে নৌকাবিহার ও অরণ্য দর্শন। সন্ধ্যেতে এই ছোট্ট জনপদের সাথে পরিচিত হবার জন্য লজ থেকে রাস্তাতে নেমে এলাম। সাজানো গোছানো শহর, পরিস্কার রাস্তা। এগিয়ে যেতেই দর্শন হল কয়েকটি ছোট অথচ সুন্দর চার্চের সাথে। এরপরেই চৌ-মাথা। সেখানে পৌঁছাতেই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকি ! সারি সারি মসলা ও গাছ গাছড়া থেকে তৈরী ওষুধ, সুগন্ধী তেল, প্রসাধনী দ্রব্যসামগ্রী বিক্রীর দোকান। না, বলতে ভুল হল আর রয়েছে শুধুমাত্র চকোলেট, লজেন্সের দোকান। এখানে এটাও বিখ্যাত।
আমরা খোঁজ খবর নিয়ে একটি দোকানে ঢুকলাম। এখানে বিভিন্ন মানের মসলা পাওয়া যাচ্ছে। তাদের দামেরও তারতম্য আছে। আমরা নিজেদের জন্য, আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধবকে উপহার দেবার জন্য কিনলাম লবঙ্গ, এলাচ, গোল মরিচ, দারুচিনি, ব্যাথাবেদনা উপশমের জন্য তেল, গায়ে মাথা সুগন্ধি সাবান, ঘরের মেঝে, বাথরুম পরিস্কার করার জন্য সুগন্ধি তেল, কফি। আরো শয়ে শয়ে বিভিন্ন উপাদানের জিনিষপত্র রয়েছে যা নিতে ইচ্ছা থাকলেও নিজের মানি ব্যাগ ও লাগেজের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করলাম।
দাম মিটিয়ে বের হবার মুখে দোকানের ম্যানেজার আমাকে হাত বাড়াতে বললেন। আমিও হাতটা বাড়ালাম। উনি আমার হাতের তালুতে ঘষে দিলেন খুব ছোট্ট একটা শিশির রোলিং মুখ। বললেন দুই হাতের তালু ঘষে নাকের সামনে এনে ঘ্রাণ নিতে । আমিও তাই করলাম। নাকের সামনে এনে ঘ্রাণ নিতেই মন প্রাণ জুড়িয়ে গেল। ভেষজগুণে সমৃদ্ধ এই তরলের কয়েক ফোঁটাতেই ম্যাজিক। মাইগ্রেনের অব্যর্থ ওষুধ। আবার নতুন করে কেনাকাটা, না কিনে পারা যায় না। ব্যাগ ভর্তি করে লজে ফিরে এলাম।
| মসলা বাগান, মুন্নার, কেরালা |
পরের দিনে পেরিয়ার বেড়ানোর পরে কুমিলিতেই রাত্রিবাস। তারপরে চললাম মুন্নারের পথে। পথেই চোখ জুড়িয়ে গেল চা বাগানের রকমারী সবুজ সৌন্দর্যে। কিন্তু মুগ্ধ হলাম “spices and herbals” বাগান দেখে। আঁকাবাঁকা ঢালু পাহাড়ি পথে এগিয়ে চলি আর বিস্মিত হই। নামে চেনা বহু গাছপালার সাথে প্রথম পরিচয় হল। এলাচ গাছে ধরে থাকা কাঁচা এলাচ, ঝুলে থাকা কোকো ফল, কফি গাছ, ভ্যানিলা, নানান ঔষধি গুণে সমৃদ্ধ নানান গাছ দেখতে দেখতে আমরা গোটা বাগানটাই ঘুরে ফেললাম। এছাড়াও পাহাড়ি বাগান আলো করে রয়েছে নানান রঙের ফুল।
| মশলা বাগানে এলাচ গাছ |
সেখানেই প্রাকৃতিক পরিবেশে আমরা দুপুরের ভোজন সেরে ফেললাম। ওদের বাগানের গাছ গাছড়া থেকে প্রস্তুত নানান ওষুধ, প্রসাধনীদ্রব্যের একটা ছোট্ট দোকান ছিল। আমরা সবাই নিজের নিজের প্রয়োজন মত কিছু কিছু কিনলাম, দামও বেশী। ভাবলাম একবারই তো ঠকব নিয়েই দেখি। তবে ফিরে এসে কিছুদিন ব্যবহার করে বুঝলাম - না কিনে কিছু ভুল করিনি। সবচেয়ে উপকার পাচ্ছি মাথা ব্যাথা, গায়ে হাতে ব্যাথার ওষুধ।
| কোকো ফল শোভা পাচ্ছে |
এতো গেল ওষুধপত্রের কথা। এছাড়া সেখানকার গাছের কফি, নানান স্বাদের চা কিনলেও ঠকবেন না কেউ। আর বাকি থাকল চকোলেটের গল্প। এখানে বাড়িতে বাড়িতে নানান স্বাদের চকোলেট, লজেন্স তৈরী হয়। সেগুলি বিক্রীর জন্য শুধুমাত্র লজেন্সের দোকানই আছে। এখানে ওজনে চকোলেট বিক্রী হয়।
| মুন্নারের পথে একটি দোকান |
সত্যিই কেরল যেন ঈশ্বরের দান। বাঙালী মার্কেটিং করে না এমন জায়গা নেই। শুধুমাত্র জিনিষপত্র কিনবার জন্যই আলাদা করে সময় ধরা থাকে ভ্রমনসূচীতে। কিন্তু কেরলের ঔষুধিগুণসম্পন্ন দ্রব্য সামগ্রীর টানেই কেরল চলে আসা যায়। সত্যিই ঈশ্বরের আপন দেশ। আমরা নানা জায়গায় বেড়াতে গিয়ে ক্যামেরাতে ছবি তুলে রাখি – বাড়ি এসে তাকেই ঘিরেই আবার বেড়ানোর আনন্দ নিজেদের মধ্যে ভাগ করে নি। কিন্তু কেরালার মসলার সুগন্ধে এক এমন যাদু আছে যা শুধুমাত্র গন্ধের মাধ্যমে কেরালাকে আমাদের রান্নাঘরে টেনে নিয়ে চলে এসেছে। বার বার মনে করিয়ে দেয় ঈশ্বরের দেশের কথা। শুধুমাত্র মসলার টানেই মনে হয় কেরালা যাওয়া যেতে পারে।
থাকার জায়গাঃ রাত্রিবাসের জন্য কেরল ট্যুরিজমের সাইটে ক্লিক করুন
কিভাবে যাবেনঃ কলকাতাসহ ভারতের সব জায়গা থেকেই ট্রেনে বা ফ্লাইটে তিরুবনন্তপুরম (ত্রিবান্দ্রম) বা কোচি চলে আসা যায়।
সুন্দর উপস্থাপনা
উত্তরমুছুনExcellent
উত্তরমুছুন