ছবিতে সতীপীঠ নন্দিকেশ্বরীতলা ( NANDIKESHWARI TEMPLE , SAINTHIA )

 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

                           লালমাটির জেলা বীরভূমকে দেবভূমি বলাই যায় , একথা আগেই লিখেছিলাম।  কারণ একটাই  ৫১ সতীপীঠের পাঁচ পাঁচটিই বীরভূমের মাটিতে। অনেকেরই  জানা থাকলেও আর একবার লিখছি সতীপীঠস্থান কিভাবে গড়ে উঠেছিল। দক্ষরাজা এক সুবিশাল যজ্ঞের আয়োজন করেছিলেন। সেখানে সকলে নিমন্ত্রিত থাকলেও দক্ষকন্যা সতী ও তার  স্বামী শিবের সেখানে কোনো নিমন্ত্রন ছিলো না। স্বামীর অমতেই সতী যজ্ঞস্থলে যান এবং সেখানে অপমানিত হন। সভাস্থলে পতিনিন্দা সইতে না পেরে সতী প্রাণত্যাগ করেন। এরপর সতীদেহ কাঁধে নিয়ে মহাদেবের প্রলয়, অবশেষে বিষ্ণুর চক্রে সতীদেহ খন্ড খন্ড হয়ে ৫১ টি জায়গায় গিয়ে পড়ে। গড়ে ওঠে ৫১ টি পবিত্র সতীপীঠস্থান। নলহাটি, সাঁইথিয়া, বক্রেশ্বর, কংকালীতলা, লাভপুর এই  হলো বীরভূমের পাঁচ পবিত্র সতীপীঠ।

                       আজকে ছবির মাধ্যমে বেড়াতে নিয়ে যাব সাঁইথিয়ার নন্দিকেশ্বরীতলা। আগে যারা দর্শন করেছেন তারপরে এই জায়গার অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সহজ হয়েছে দর্শন, সুবিধা বেড়েছে দর্শনার্থীদের। তার আগে কয়েকটা কথা বলে নি। অতীতকালে সাঁইথিয়ার নাম ছিল নন্দিপুর। এখানে সতীর কন্ঠের হাড় পড়েছিল। অন্যসব সতীপীঠের মত এখানেও একখন্ড  লালশিলাখন্ড দেবীরূপে পুজো করা হয়।এখানে দেবীর নাম নন্দিনী, মহাদেব নন্দিকেশ্বর।সাঁইথিয়া রেলস্টেশনের একদম কাছে এই জায়গা। আসুন ঘুরে নেওয়া যাক নন্দিকেশ্বরীতলা।

              

NANDIKESHWARITALA, SAINTHIA,BIRBHUM
সাঁইথিয়া রেল স্টেশনে নতুন ওভারব্রীজ

 

               সাঁইথিয়া রেলস্টেশনে নেমে আগে মূল প্রবেশদ্বার দিয়ে বাইরে এসে অনেকটা পথ ঘুরে তবেই স্টেশনের পাশে থাকা নন্দিকেশ্বরীতলা পৌঁছানো যেত। তাতে সাঁইথিয়ার অপরিসর ব্যস্ত রাস্তাতে রিক্সা, টোটো ও গাড়িতে স্টেশন থেকে মন্দিরে যেতে বেশ অসুবিধা হত ও সময় নষ্ট হত। এখন সাঁইথিয়া রেলস্টেশনে নতুন ওভারব্রীজ তৈরী হয়েছে। তাতে ট্রেন থেকে নেমে খুব সহজেই অল্প সময়ে পায়ে হেঁটেই মন্দিরে চলে আসা যায়। 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
সাঁইথিয়া রেল ওভারব্রীজ

সাঁইথিয়া রেল স্টেশনের বাইরে এখানে ওভারব্রীজ এসে নেমেছে। এখান থেকে এক মিনিট নন্দিকেশ্বরীতলার মন্দির। মন্দিরের সামনেই  পার্কিং এর ব্যবস্থা আছে।


NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
প্রধান প্রবেশদ্বার

এখান দিয়েই মন্দিরতলাতে প্রবেশ করতে হবে। সামনেই চটি,জুতো রাখার সুন্দর ব্যবস্থা। তারপরেই বাঁদিকে সারিবদ্ধভাবে হাত ধোয়ার ও পানীয় জলের কল আছে। 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
বীরভূমের সব সতীপীঠের প্রবেশদ্বার একইরকম

 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

প্রবেশ করেই সুন্দর মন্দিরতলা, প্রাচীন বটগাছ সব জায়গায় নিজের শাখাপ্রশাখা বিস্তার করে রেখেছে। বহু বছর ধরেই প্রবেশদ্বারের দুইদিকে কয়েকজন ঢাকি ঢাক বাজান।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
প্রাচীন বট

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

দর্শনার্থীদের ভীড় এড়াতে এভাবেই ব্যবস্থা করা হয়েছে। এটা এক্কেবারে দেবীর সামনে গিয়ে শেষ হয়েছে।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

দেবীর সামনে পৌঁছানোর আগেই বাম দিকে মহাদেবের বিশাল মূর্তি। তাকে দেখতে দেখতেই দেবীর মন্দিরের দরজার সামনে চলে আসা যায়।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

এই জানলার সামনে থেকেই দেবী দর্শন ও পুজো দিতে হবে। পুজোর সামগ্রী সাথে করে নিয়ে আসা যায়। তবে এখানেও মন্দিরের বাইরে কিনতে পাওয়া যাবে। 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

   দূর থেকে দেবী দর্শনের জানলাটিকে ও সামনের জায়গাকে এমনই দেখতে লাগে।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

      সব সতীপীঠের মত এখানেও একটা লাল শিলাখন্ড দেবী রূপে পূজিত হন।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

 

               পুজো শেষ করে পিছন দিকে তাকালেই দেখা যায় দেওয়ালে দশমহাবিদ্যার মুর্তি শোভা পাচ্ছে।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

                     সামনে এগিয়ে যেতেই চোখে পড়ে  সারি সারি ঘন্টা, অনেকটা বর্ধমানে নবাবহাটের একশত আট শিব মন্দিরে যেমন আছে তেমনি।

 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

              আরো একটু এগিয়েই দর্শন মেলে চার দেবদেবীর মন্দিরের – শিব মন্দির, মহাসরস্বতী মন্দির, মহালক্ষ্মীগনেশ মন্দির, বিষ্ণুলক্ষ্মী মন্দির। 

 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
মহাসরস্বতী মূর্তি

           

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
মহালক্ষ্মীগনেশ মূর্তি

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
বিষ্ণুলক্ষ্মী মূর্তি
  

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

চার দেবদেবীর মন্দির অতিক্রম করে একটু এগিয়ে ডানদিকে রয়েছে ভৈরব নন্দিকেশ্বরের মন্দির।সিঁড়ি দিয়ে উঠে সামনেই দরজা। পাশে এক জানালা, সেখান দিয়েও মহাদেবের দর্শন করে নেওয়া যায়।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM
ভৈরব নন্দিকেশ্বর মন্দিরের ভিতরের দৃশ্য

              মন্দিরের ভিতর যতটা জায়গা সেই অনুপাতে শিব লিঙ্গটি বড় নয়।

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

 


NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

 ভৈরব নন্দিকেশ্বর মন্দিরের পাশেই রয়েছে বজরঙবালীর মন্দির। ভিতরে প্রবেশ না করেও দিব্যি দর্শন করে নেওয়া যায় ভিতরের মূর্তিগুলো।


 

এইভাবে দেখতে দেখতে প্রায় সমগ্র মন্দির প্রাঙ্গনটাই দেখা হয়ে যায়। আরো অসংখ্য দেবদেবীর মন্দির চারপাশে রয়েছে। যাদের মধ্যে বেশীরভাগই মহাদেবের। পানীয় জল ও সাধারণ জলের ব্যবস্থা আছে আগেই লিখেছি। এখন ভক্ত ও দর্শনার্থীদের কথা ভেবে একটি সুলভ শৌচালয় গড়ে উঠেছে। 

 

NANDIKESWARI TEMPLE, SAINTHIA,BIRBHUM

                 নন্দিকেশ্বরী মন্দিরতলা দর্শনের বাড়তি পাওনা হল ভগবান জগন্নাথদেবেরও দর্শন পাওয়া। নন্দিকেশ্বরী মন্দিরের মূল প্রবেশদ্বারের পাশেই রয়েছে জগন্নাথদেবের খুব সুন্দর এক মন্দির।

 

JAGANNATH TEMPLE,SAINTHIA,BIRBHUM

                মন্দিরে প্রবেশের পরে রয়েছে বেশ খানিকটা জায়গা, তারপরে জগন্নাথদেবের মন্দির ও মূর্তি।

জগন্নাথ, বলরাম ও সুভদ্রার মূর্তি

 

পাশেই রয়েছে বড় ধূপদানী, সেখানেই সবাই ধূপকাঠি জ্বালাতে পারেন
  

মন্দিরের বামে তাকালে এমনই চোখ জুড়ানো ছবি দেখা  যায়
 
             হাতে সময় নিয়ে দেখলে এই জায়গা আশাকরি সকলেরই ভাল লাগবে।   সাঁইথিয়াতে পর্যাপ্ত ভাল মানের লজ না থাকাতে  রাত্রিবাসের  জন্য  মাত্র  ১৮ কিমি দূরে  সিউড়িতে  লজ নেওয়া যেতে পারে।
যোগাযোগঃ   হাওড়া  ও শিয়ালদহ থেকে  রামপুরহাটগামী  ও  উত্তরবঙ্গগামী  যে কোন ট্রেনেই সরাসরি সাঁইথিয়া রেলস্টেশনে  আসা যায়।  জংশন  হওয়াতে  অন্ডাল থেকে  লুপ লাইনেও আসা যায়।  কলকাতা থেকে সরাসরি বাস যোগাযোগ নেই , তবে কলকাতা থেকে  প্রচুর  বাস সিউড়ি আসে । সিউড়ি থেকে  সাঁইথিয়া মাত্রই  ৪৫ মিনিটের পথ।

মন্তব্যসমূহ

  1. ফটো ফিচার যথার্থ ।ছবিতেই সতীপীঠ দর্শনের সুযোগ করে দেওয়ার জন্য লেখক কে ধন্যবাদ জানাই 👍

    উত্তরমুছুন

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন