কোভালামের গল্প ( Kovalam - enjoy three crescent beaches )
তিরুবনন্তপুরম থেকে গাড়িতে চলেছি কোভালাম। রাস্তা মাত্রই ১৬ কিলোমিটার। সেখানেই আমাদের রাত্রিবাসের ব্যবস্থা আছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ কিন্তু এখানে সেটা বুঝতে পারা যাচ্ছে না। বেশ গরম, তারপরে দক্ষিন-পশ্চিম ভারতে দিনশেষের আলো থেকে যায় সাতটার পরেও। তাই মনে ক্ষীণ আশা গাড়ি দেরীতে চললেও কোভালাম সৈকতে সূর্যাস্তের শোভা নিশ্চয়ই দেখতে পাব।
অবশেষে পৌঁছালাম কোভালামে। রাস্তাতে বেশ ভীড়, করোনার ভয় কাটিয়ে অনেকেই বছর শেষে আনন্দ করতে এখানে চলে এসেছেন। গাড়ি আমাদের হোটেল অবধি এগোতে পারছে না। জায়গাটা একদম একটা পাহাড়ি জনপদের মত। রাস্তা বেশ চড়াই। লজের খানিকটা আগে আমরা গাড়ি থেকে নেমে গেলাম। লজটা কোভালামের লাইট হাউস সৈকতের কাছেই। তাই প্রথমেই ক্যামেরা নিয়ে সোজা চলে গেলাম সেখানে। দিনের শেষ রক্তিম আভা আরব সাগরের জলে রঙের ম্যাজিক সৃষ্টি করলেও সূর্যাস্তের শোভা থেকে বঞ্চিত হলাম।
| দিনের শেষে রোমাঞ্চ, কোভালাম |
| লাইট হাউসের আলো নাবিকদের দিক নির্দেশ করছে, কোভালাম |
আমাদের লজটির তারিফ না করেও পারা যায় না। চারতলার উপরে আমাদের সুন্দর ডবল বেডরুমের ঘর, ভিতরে আরামে থাকবার সব ব্যবস্থাই পাকাপোক্ত। বাইরে না গিয়েও ঘরের বারান্দা থেকে রাতের কোভালাম সৈকতের সৌন্দর্য দেখে ও সাগরের গর্জন শুনেই সময় কাটিয়ে দেওয়া যায়। বারান্দা থেকে দোতলাতে থাকা লজের নিজস্ব সুইমিং পুলটিও মনোরম। তবুও নতুন জায়গা দেখার লোভে বাইরে রাস্তাতে এলাম আমরা। আমাদের সামনে থেকে চড়াই রাস্তা বাঁক নিয়ে উঠে গেছে, আমরাও দম লাগিয়ে উপরে উঠে এলাম। কিছু জিনিষ কেনাকাটার ছিল, সেগুলো কেনা হয়ে গেল। এবার একটা অন্য অভিজ্ঞতার কথা বলি। হাত কেটে যাওয়াতে আমার একটা anti tetanus injection নেবার দরকার হয়। আমাদের রাজ্যে যে কোন ওষুধের দোকানে গিয়ে এই ধরনের injection নেওয়া যায় , দোকানের কম্পাউন্ডারই দিয়ে দেন। কিন্তু এখানে দেওয়া তো দূরের কথা সেটা বিক্রীও করে না। আমাদের যেতে হল স্বাস্থ্যকেন্দ্রে , নাম ঠিকানা নথিভুক্ত করে তবেই আমাকে এক নার্স injection দিলেন। এটা সকলের জেনে রাখা দরকার।
| সকালে অন্য রূপে অন্য সৈকতে |
পরদিন খুব সকালেই ঘুম থেকে উঠে সোজা সৈকতে। যদিও পশ্চিম ভারতে আরব সাগরে সূর্যোদয়ের শোভা দেখার কোন সুযোগ নেই তবুও সকালের একটা আলাদা সৌন্দর্য আছে। অর্ধচন্দ্রাকৃতি সৈকতের শোভা গোয়ার পালোলেম সৈকতের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আরব সাগরের বুকে তৈরী হওয়া বহু ঢেউ সৈকতের সোনালি বেলাভূমি ছোঁয়ার আগেই জলের মধ্যে মাথা উঁচিয়ে থাকা পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে সাদা ফেনার সৃষ্টি করে চলেছে। আরো দূরে বেশ কিছু ডিঙ্গি নৌকা ঢেউয়ের তালে ওঠানামা করছে। এরমধ্যেই ঢেউকে ঘিরে বড়দের ছেলেমানুষি চলছে। পাশাপাশি চলছে ক্যামেরা ও মোবাইল ক্যামেরাতে আনন্দের মুহূর্ত ফ্রেম বন্দী করার কাজ।
| বড়রাও যখন ছোট হয়ে যায়, কোভালাম |
কোভালাম কথাটির অর্থ “ নারকেল গাছের সারি”। সত্যিই কোভালাম সৈকতের পিছনদিকে টিলা ও তাতে সারিবদ্ধভাবে নারকেল গাছের সারি একে গড়ে তুলেছে অনন্য। কোভালাম সৈকতের তিনটে ভাগ – সমুদ্র সৈকত, হাওয়া সৈকত ও লাইট হাউস সৈকত। লাইট হাউস সৈকতই সবচেয়ে জমজমাট , এখানে বেশ কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আমরা চলে এলাম লজে।
| একরাশ সবুজ, নারকেল গাছে ঢাকা পথ |
ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা চললাম অপর আর একটি সৈকতে। নারকেল গাছের ছায়ায় ঘেরা পথ পার হয়ে এলাম সমুদ্রের কাছাকাছি। এখানে সমুদ্র সৈকতের মাঝে মাঝেই কালো পাথর। খানিকটা বেলাভূমি, সেখানে অনেকেই সমুদ্র স্নানে ব্যস্ত। এখানকার সমুদ্রের এক অন্য সৌন্দর্য।
| দুধ সাদা ফেনা মন ভরিয়ে দেয় |
অশান্ত ঢেউ অবিরাম কালো পাথরে এসে ধাক্কা খেয়ে দুধ সাদা ফেনা সৃষ্টি করে চলেছে। তারই মাঝে শিকারি মাছরাঙা ওত পেতে বসে আছে মাছের আশায়। কোভালামের এই অংশের সাথে গোয়ার ভাগাতোর সৈকতের অনেক মিল পাওয়া যায়। মন চায় নারকেলবীথির শীতল ছায়াতে সারাটা দিন কাটিয়ে দিই। কিন্তু বাস্তবে আমাদের ভ্রমণসূচী আলাদা। তাই লজমুখো হতেই হল। যেতে হবে ভারকালা সৈকত ছুঁয়ে আলেপ্পিতে।
| কোভালাম সৈকত, কেরালা |
| ভাগাতোর সৈকত, গোয়া |
তবে একান্তে একটা কথা বলে রাখি কোভালাম ভারতের অন্যতম সেরা সৈকত ,যারা প্রথমবার দর্শন করবেন তাদের অবশ্যই মন ছুঁয়ে যাবে। কিন্তু যদি গোয়ার পালোলেম, ভাগাতোর সৈকত দেখা থাকে তাহলে হয়ত সেইভাবে ভাল নাও লাগতে পারে। মন তখন সর্বক্ষন তুলনা করে যাবে কোভালামের সাথে পালোলেমের।
কোথায় থাকবেনঃ রাত্রিবাসের জন্য কেরল ট্যুরিজমের সাইটে ক্লিক করুন
অসাধারণ বর্ণনা👌👌
উত্তরমুছুন