কৌশানির পথে পথে (Kausani – a picturesque hill station famous for its spectacular 300 km-wide panoramic view of the Himalayas)
| কৌশানির সৌন্দর্য, সারাদিন এইভাবেই মুগ্ধ করে সবাইকে |
নৈনিতালে দিন তিনেক থেকে গাড়ি নিয়ে আমরা রওনা দিলাম কৌশানির পথে । পথে সব দ্রষ্টব্য দেখতে দেখতে যখন কৌশানি পৌঁছালাম তখন বিকেল। প্রথম দর্শনে মোটেও জায়গাটা ভাল লাগল না। অক্টোবর মাস হলে কি হবে, আকাশ মেঘে ঢাকা। কোন্ দিকে তাকালে কি দেখতে পাব, কিছুই বুঝে উঠতে পারলাম না। সেই রাতটা মন খারাপ নিয়েই শুতে চলে গেলাম। মাঝ রাত্রে তুমুল বৃষ্টি। ভাবলাম এটাই বাকী ছিল ! এবার হাঁটা চলা করাও সমস্যা হবে।
ভোর বেলায় আমাদের রুমের দরজায় ধাক্কা দেওয়ার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেল। দরজা খুলতেই দেখি আমার ভ্রমণ সঙ্গী দেবাশীষ উত্তেজিত হয়ে বাইরে আসতে বলেছে। আমরাও কিছু না বুঝেই তাড়াতাড়ি বাইরে চলে এলাম। বাইরে আসতেই যে দৃশ্য দেখলাম তাতে আমার চোখ জুড়িয়ে গেল। ভাবলাম স্বপ্ন দেখছি না তো ! কাল রাতের বৃষ্টিতে সব মেঘ সরে গিয়ে উত্তর আকাশ জুড়ে শুধুই শৈলশিখরমালা। যতদূর চোখ যায় শুধুই তুষারমন্ডিত গিরিশৃঙ্গ। আসলে কৌশানির মূল সম্পদই হল এর অনুপম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। প্রায় ৩০০ কিলোমিটার দীর্ঘ হিমালয় পর্বতমালার বিস্তার একই জায়গা থেকে উপভোগ করা যায়। বিখ্যাত যে যে গিরিশৃঙ্গগুলি এখান থেকে দেখতে পাওয়া যায় তা হল চৌখাম্বা, তিন শৃঙ্গের ত্রিশূল, পঞ্চচুলি, নন্দাদেবী, নন্দাঘুন্টি ইত্যাদি।
১৮৯০ মিটার উচ্চতায় হিমালয়ের কোলে অবস্থিত শান্ত, নিরালা, ছোট্ট এক জনপদ এই কৌশানি। ১৮৬৪ সালে ব্রিটিশদের হাতে এর গোড়াপত্তন। মহাত্মা গান্ধীও ১৯২৯ সালে এখানে ১২ দিন থাকবার সময় এখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে যান।
আমাদের সকালের সময়টা কিভাবে কেটে গেল বুঝলাম না। সূর্যোদয়ের সময় সূর্য রশ্মির রক্তিম আভা এইসব শৃঙ্গের তুষারমুকুটে প্রতিফলিত হয়ে যে অপার্থিব সৌন্দর্য আমাদের সামনে এনে উপহার দিল, সেটা আমরা মন্ত্রমুগ্ধের মত দেখে গেলাম। এরপর নিজের ইচ্ছামতো সারাদিন কৌশানির পথে পথে ঘুরে বেড়ালাম। এটুকু বলতে পারি সারাদিন প্রকৃতির সাথে কাটিয়ে দেওয়ার অকৃত্রিম আনন্দের খনিটা এখানেই আছে। বিকেলে চড়াই পথে সবুজের মধ্যে দিয়ে পৌঁছে গেলাম গান্ধিজীর অনাশক্তি আশ্রমে। এটা এখানকার অন্যতম দর্শনীয় স্থান। অসাধারন পরিবেশ এই আশ্রমের। এর উচ্চতা এতটাই যে, এখান থেকে ৩০০ কিমি লম্বা পর্বতমালার অনুপম শৈলসুষমা ও তার উপরে প্রকৃতির রঙের ম্যাজিক খুব ভালো ভাবে উপভোগ করা যায়। আমরা আশ্রমে ঘুরতে ঘুরতেই চলে এলো সেই মহেন্দ্রক্ষণ। সূর্যাস্তের সময়ে পাহাড় চূড়ায় ঘটে যাওয়া প্রাকৃতিক ম্যাজিকের সাক্ষী রয়ে গেলাম।
| সূর্যাস্তের অপরূপ শোভা, মনে থাকবে চিরদিন |
পরের দিন আমাদের বাইরে যাওয়ার প্ল্যান। কৌশানির আশেপাশে ঘোরার জন্য একটা গাড়িতে করে বেড়িয়ে পড়লাম। এখানকার মজা এমনই যে, আমরা যেখানেই যান না কেন উত্তরের শ্বেতশুভ্র পর্বতমালা সবসময় আমাদের সাথে সাথে ছিল। কিছুটা যেতে না যেতেই পাহাড়ের ঢালে সবুজ চা বাগান দেখে চোখ ও মন জুড়িয়ে গেল। এ যেন আমাদের কাছে বাড়তি পাওনা।
পাইন ঘেরা পথের সৌন্দর্য উপভোগ করতে করতে এক সময় পৌঁছে গেলাম বৈজনাথ মন্দিরে। কৌশানি থেকে ১৯ কিমি দূরে গোমতী নদীর তীরে এই মন্দিরমালা। নানান মাপের প্রাচীন মন্দিরের প্রত্যেকটিই নজরকারা স্থাপত্যে সমৃদ্ধ। এগুলি ত্রয়োদশ শতকে কাত্যুরী রাজবংশের তৈরী। এর পরেও আমাদের অবাক হবার ও আনন্দ পাবার আরো উপকরণ মজুত ছিল। মন্দির থেকে একটি পথ সোজা গোমতি নদীর দিকে চলে গিয়েছে। কাচের মতো স্বচ্ছ জল। জলের মধ্যে অসংখ্য ছোট বড় মাছ। তাদেরকে জলের উপর থেকেই দেখতে পাওয়া যায়। এ যেন এক বিরাট প্রাকৃতিক অ্যাকোরিয়াম।একটু খাবার নিয়ে জলে দিতেই আমাদের পায়ের কাছে ভীড় জমাল অসংখ্য মাছ। খাবার খাওয়াতে খাওয়াতে অনাবিল আনন্দে ভরে উঠল মন। ভাবলাম স্বর্গ বলে যদি কিছু থাকে সেটা এখানেই।
| আমাদের লজের থেকে যেমন দেখেছি |
আরো জানার জন্য এখানে ক্লিক করুন <<>>
Virtually e jano dekhe nilam .... oswadharon presentation
উত্তরমুছুন