মনের জোড়ই শেষ কথা- best medicine for COVID is mental strength
লেখাটা কিভাবে শুরু করব নিজেই বুঝতে পারছি না। একটা মানুষ যখন মৃত্যুর সীমানা থেকে ফিরে আসে তখন বোধহয় এমনই হয়। আমিও ২১ শে এপ্রিল কোভিড পজিটিভ হবার পরে সকলের ভালবাসা ও গত এক মাস ধরে বাড়ির সকলে, আত্মীয়রা, পাড়ার সমস্ত মানুষ, বন্ধুরা, সহকর্মীরা প্রচুর পরিশ্রম ও চাপ নিয়ে গত ১৭ই মে আমাকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন। এখনও আমার নাকে অক্সিজেনের পাইপ। ডাক্তারবাবু বলেছেন বাড়ি গিয়েও আরো সাত দশ দিন অক্সিজেন সাপোর্টে থাকতেই হবে। জানি না কবে স্বাভাবিক জীবনে ফিরব ? এই দীর্ঘ এক মাস হাসপাতালে থাকার কারণে নানান অভিজ্ঞতা আমার হল। অনেক কিছু শুনেছিলাম কিন্তু নিজের অভিজ্ঞতার মূল্য আলাদা। আমার এই লেখাটা এই সময়ে লেখার এইটাই কারণ আমার লেখা থেকে প্রয়োজনীয় কিছু পেয়ে যদি একটা মানুষেরও প্রাণ কোভিড থেকে বাঁচে তাহলে এই সময়ে কষ্ট করে আমার এই লেখা সার্থক হবে।
আমার শরীর খারাপের শুরুটা ছিল ১৭ই এপ্রিল নাগাদ। সেই সময় গনতন্ত্র রক্ষার গুরু দায়িত্বের চিঠিটা আমার হাতে চলে চলেছে। ট্রেনিং হয়ে গেছে। আমার দায়িত্ব বাড়ি বাড়ি গিয়ে বয়স্ক, প্রতিবন্ধী ভোটারদের যে ভোট গ্রহণ করা হবে তার মাইক্রো অবজারভার। শরীর খারাপ নিয়ে কিছু ওষুধপত্র খেয়ে প্রথম দুদিন ডিউটি করলাম। মোট চার দিনের কাজ, দরকার লাগলে আবার ডাকবে এমন কথাই চিঠিতে লেখা আছে। কিন্তু তৃতীয় দিন সকালে উঠেও আমি ঠিক করতে পারছি না যে ডিউটিতে যেতে পারব না পারব না। না গেলেই শো-কজের চিঠির ভয়। শেষ পর্যন্ত শরীর সাথ দিল না, যেতে পারলাম না। নির্বাচন কমিশনের ব্লক অফিস একটা হোয়াটস্ অ্যাপ গ্রুপ করেছিল, আমি তাতেই একটা চিঠির মত করে লিখে রাখলাম। বাকী কথা বলার দায়িত্ব দিলাম আমার ভাইয়ের মত সহকর্মী ত্রিদিবকে, তারও একই জায়গায় ডিউটি থাকায় সুবিধা হল। তবে সাঁইথিয়া ব্লকের তরফে খুব সুন্দর ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় আমি মুগ্ধ। ওনারা আমাকে ডিউটি থেকে রিলিজ করে দিলেন।
এরপর সিউড়ি সদর হাসপাতালে করোনা টেষ্টের জন্য গেলাম ও প্রায় সাথে সাথে রিপোর্ট দিলেন আমি পজিটিভ। সেই দিন বাড়িতেই হাসপাতালের দেওয়া ওষুধ খেলাম, রাত্রে আরো শরীর খারাপ হল। অক্সিজেন লেভেল নেমে যেতে লাগল ৭০ এর ঘরে। খুব কষ্ট করে একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পাওয়ায় এই রাত পার হল। বোঝা গেল করোনা দুই ফুসুফুসে থাবা বসিয়ে দিয়েছে। এইখানে নিজের গাফলতির কথা স্বীকার করে নিতেই হবে। আমি যদি শরীর খারাপের প্রথম দিনেই ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা শুরু করে দিতাম তাহলে হয়ত ক্ষতিটা এতটা ভয়ঙ্কর হত না। তাই দয়া করে যে ভুল আমি করেছিলাম , সেটা কেউ করবেন না। করোনার সেকেন্ড ওয়েভে কার কোথায় ক্ষতি হবে তা বলা মুসকিল। আমার ক্ষেত্রে ফুসফুস আক্রান্ত ।
পরের দিন সকালে ফোন করে একটি সরকারী অ্যাম্বুলেন্স এলো । ওরা আমাকে একাই নিয়ে চলে গিয়ে একটি সরকারী হাসপাতালে ভর্তি করে দিল। আমার এই লেখা কোন সাংবাদিকের চোখ দিয়ে দেখে সরকারী বা বেসরকারী হাসপাতালের পরিবেষা নিয়ে সমালোচনা করার জন্য নয়। তাই আমি এখানে ইচ্ছা করেই নামগুলো করছি না। আমাকে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করে ওরা এমন একটা ঘরে রাখল যেটা আপাতদৃষ্টিতে ভাল, দুজন থাকার বেড, সাথে বাথরুম। আমি ও আরো একজন কিন্তু সেখানে কোন অক্সিজেনের ব্যবস্থা নেই, তাছাড়া সেই ফ্লোরে কোন দেখভাল করার জন্য মানুষ নেই। আমি পাশের বেডের মানুষটার কষ্ট দেখে নিজেই আস্তে আস্তে ঘরের বাইরে এলাম, যদি কাউকে দেখতে পাই। কিন্তু কেউ কোথাও নেই, শুধুমাত্র পাশের দুটো ঘরে আরো পেশেন্ট রয়েছেন। অনেক পরে আমাদের সিটি স্ক্যান করার জন্য নিয়ে গেল। আস্তে আস্তে নেমে গেলাম।
এবার আমাকে অন্য ঘরের বেডে দিল যেখানে অক্সিজেন সাপোর্ট আছে। সেই থেকে আমার জীবন তিন ফুট বাই সাড়ে পাঁচ ফুট বেডে আবদ্ধ হয়ে গেল। দেখলাম আরো পেশেন্ট রয়েছেন তারা নামতে পারছেন , বাথরুমে যেতে পারছেন কিন্তু আমার ক্ষমতায় কুলায় না। খুব কষ্ট করে যাই, তখনও বুঝি না আমি গভীরভাবে আক্রান্ত। না জানার জন্য মনের জোড়ে করে চলেছি। এরপর ঘটল এক দূর্ঘটনা। রাতের খাবার দিয়ে গেছে, সামান্য কিছুও খেতে পারলাম না। তখন তো স্বাধহীন, গন্ধহীন। আমি অল্প খেয়ে বাকীটা প্যাকেটে মুড়ে বেড থেকে নেমে বেডেরই পিছন দিকে ফেলতে গেলাম। আমার চোখদুটো হঠাৎ অন্ধকার হয়ে গেল , আমি তখনও আমার বেডের লোহার সাপোর্ট ধরে আছি। আমি পড়ে যাবার আগেই কে যেন আমাকে ধরে নিল। আমাকে বলল- এভাবে কেউ নিজে ফেলতে আসে, এখনি পড়ে গেলে কি হত ? তারপর থেকে শিক্ষা নিলাম , একা কিছুতেই আর নয়। এভাবে দুদিন এখানে কেটে গেল। আমার সামনের বেডে ভর্তি ছিলেন এক বেশ বয়স্ক মানুষ , উনিও অক্সিজেন সাপোর্টে ছিলেন । তবে অনেকবার করে বেড থেকে নামছিলেন , আবার বেডে উঠছিলেন। আসলে আমাদের ঘরে টানা দেখভাল করার মত কোন মানুষ ছিলেন না। হঠাৎ একবার দেখি সেই বয়স্ক মানুষটি নিজের বেডের নীচে পড়ে রয়েছেন, আমার দেখে মনে হল সব শেষ। কিন্তু দুঃখের সেই মানুষটি পড়ে রইলেন ঘন্টার পর ঘন্টা , তাকে পরীক্ষা করে জীবিত না মৃত তাও দেখা হল না। অনেক পড়ে কোভিড নিয়ম অনুয়ায়ী প্যাকিং করে নিয়ে চলে গেল। সেই আমার দেখা শুরু। আমার তিনদিন কেটে গেল , আমি কিছুই বুঝি না, আমি ভাল হচ্ছি না সেটা বুঝছি। বাড়ির সাথে যোগাযোগ বা কথা বলার কোন উপায় নেই। হাতে ফোন নেই, ঘড়ি নেই। যাকে দেখি তাকেই অনুরোধ করি - আমাকে একটু বাড়ির সাথে কথা বলিয়ে দিন না , কেউ দেয় না। পরে একজনের কি দয়া হল সে অন্য এক পেশেন্টের মোবাইল আমাকে এনে কথা বলিয়ে দিল। এরপরে আমার আর মনে নেই এখানকার কথা।
হঠাৎ পাঁচদিন পার হবার পরে ( এটা পরে জেনেছি ) আমার এই হাসপাতাল থেকে বাড়িতে ফোন যায় যে আমার অবস্থা খুব সংকটজনক , আমাকে মনে করলে এখান থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যেতে পারে। সেই রাত্রে আমার ভাই, আমার বন্ধু ও সহকর্মীরা একটা অ্যাম্বুলেন্স জোগাড় করে আমাকে বর্ধমানের এক বেসরকারী হাসপাতালে অনেক কষ্ট করে ভর্তি করে প্রায় মাঝরাতে। তারপরে আমার ঠিকানা প্রথম আঠারো দিন আই সি ইউ এর চার নম্বর বেড। আমার অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে আমার প্রথম দিন পাঁচ সাতের কথা জানা নাই। তারপরে আমার অবস্থার একটু উন্নতি হল। মন চাইত বাড়ি চলে যাই, কোন উপায় নাই। আমার ঘাড় ও গলার সন্ধিস্থলের কাছে চারটে মুখ করা সেন্ট্রাল চ্যানেল। সেখান দিয়ে চলতে লাগল, শুধু অ্যান্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড, স্যালাইন, অন্য ওষুধ। হাতের আঙুলে একটা ছোট যন্ত্র লাগানো যেটা মাথার কাছে রাখা মনিটরের সাথে যুক্ত। সমানে দেখিয়ে চলেছে আমার অক্সিজেন লেভেল ও পালস্ রেট। নাকে অক্সিজেন মাস্ক। বেডের মধ্যেও নড়াচড়া করা বড়ই কঠিন। এই অবস্থায় দিন পার হতে চলল। একদিন অন্তর এক্স-রে হয় আশায় থাকি , আজ হয়ত ডাক্তারবাবু বলবে সেরে গেছে। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে হয় উলটো। হাসপাতালে বাড়ির কোন জিনিষ নিয়ে যাওয়া মানা থাকায় আমার কাছে মোবাইল, ঘড়ি কিছুই ছিল না। আই সি ইউ এর পরিবেশটা এমনই যে আমি প্রথম দিকে সময় বুঝতে পারতাম না। ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ দেওয়ার সময় থেকে বুঝতে হত সময়টা।
একটু সুস্থ হবার পরে পরে আমার চারদিকের নানান ঘটনা ও অসঙ্গতি চোখে পড়তে লাগল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বলতে চাইছি যে কোন রোগীরই নিজে থেকে কিছু করা ঊচিত নয়, যার ফল হতে পারে মারাত্মক। আই সি ইউ তে বেশীরভাগ রোগীরই শ্বাসকষ্ট ছিল। আমাদের প্রথমদিকে হাইমাস্ক দেওয়া ছিল, যেটা পুরো নাক ও মুখ দুটোই ঢাকা থাকত। সেটা কোন সময়ই খোলা রাখা যাবে না, এমন কি ভাত খাবার সময়তেও মুখে খাবার দিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঢেকে নিয়ে খেতে হবে। কিন্তু অনেককে দেখতাম, যারা সিষ্টারদের বকুনি সত্বেও মাস্ক খুলে রাখত। এর থেকে একজনের চরমতম ক্ষতি আমার চোখের সামনে ঘটে গেল। আমি সবসময় চেষ্টা করে করে গেছি ডাক্তার ও সিষ্টারদের কথা সেইভাবেই মেনে চলতে।
এরপরে আসছি বাইরের খাবারের কথা। সব খাবার যে খাওয়া যাবে না, সেটা বাড়ির লোকদেরও বুঝতে হবে। অতিরিক্ত ভালবাসাও ক্ষতি করে দিতে পারে। আমাদের সকালে ও বিকেলে যে চা বা খাবার দেওয়া হত তা পুরোপুরি ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য। চিনি ও দুধ ছাড়া চা ( যা আমার কোন দিন পছন্দ নয় ) তাকেও আমি কদিনে ভালবেসে আপন করে নিলাম। সাথে ক্রীমক্র্যাকার বিস্কুট, অন্য বিস্কুট হাজার অনুরোধেও দেবে না। ভাত বা রুটির সাথেও তাই। তরকারী থাকত শুধুমাত্র সব্জী দিয়ে , আলু বর্জিত। তার কারণ ছিল , সবাই ডায়াবেটিক না হলেও এখানে হাই ডোজের অ্যন্টিবায়োটিক ও স্টেরয়েড চলাতে অনেকেরই ব্লাড সুগার বেড়ে যাচ্ছিল। সেই সময় আমার ডান পাশের বেডে এক বয়স্ক মহিলা ( ষাট বছরের ঘরে হবে ) ছিলেন। উনি মোটামুটি ভালই থাকছিলেন। কিন্তু আমি দেখতাম ভিসিটিং টাইমে ওনার বাড়ির লোক আসতেন ও ফ্রুট জুসের প্যাকেট, অন্য খাবার দিয়ে যেতেন। উনিও খেতেন। একদিন হঠাৎ করে উনি অসুস্থ হয়ে জ্ঞান হারালেন , অনেক চেষ্টা করেও আর এল না, ওনাকে অন্য কোথাও নিয়ে চলে যাওয়া হল। আমার মনে হয়েছিল বাইরের খাবার এর কারণ। প্যাকেট ফ্রুট জুসে প্রচুর সুগার ও অন্যান্য জিনিষ থাকে। সেই থেকে হয়ত কোন বড় ক্ষতি।
প্রতিটা দিনেই মনে হত, আজ বোধহয় বলবে আমাকে এবার ছেড়ে দেবে। আমার পাশের বেডে একটি তরুন ছেলে ভর্তি ছিল। এত সুন্দর চেহারা যে রোগী বলে মনেই হত না। আমার মনে হয়েছিল একে বোধহয় দু এক দিনে ছেড়ে দেবে। একদিন ছেলেটি ডাক্তারবাবুকে ছেড়ে দেওয়ার কথা জিজ্ঞাসা করতেই ডাক্তারবাবু বললেন - ভাই ,এটা মাথায় রাখবে এটা কিন্তু কোন টি টয়েন্টি ম্যাচ নয়, এটা টেষ্ট ম্যাচ। তোমাকে আরো অন্তত দশ দিন থাকতে হবে। সেই থেকে আমার যত কষ্টই হোক আমি ঠিক করেছিলাম , আমি নিজে থেকে রিলিজের কথা কখনোই বলব না। সেটা শুধু হাসপাতালে নয়, পোষ্ট কোভিডেও প্রযোজ্য। এখানেও ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরতে হবে। একটু বেচাল হলেই আবার সমস্যা। সত্যিই যেন ঘূর্ণি পীচে ব্যাটিং করা, একটা ভুলেই উইকেটের পতন হতে পারে।
জ্ঞান থাকা অবস্থায় আই সি ইউ তে থাকাটা যে কতটা কঠিন সেটা যে না থেকেছে , সে ছাড়া কেউ বুঝবে না। প্রায় প্রতিটা রাতে মুমূর্ষু রোগী এখানে আসত, তারপর সারা রাত ধরে চলত চিকিৎসার দাপাদাপি। এরপর কেউ সেই রাতেই , কেউ বা দুদিন পরে চিরতরে চোখের সামনে থেকে চলে যেতে লাগল। তারপরে তার বডি বাঁধা, তাকে নিয়ে যাওয়া দেখা যে কতটা মানসিক চাপের বলে বোঝাতে পারব না। হাসপাতাল থেকে গোটাটাই পর্দা দিয়ে করত কিন্তু তাও বুঝতে পারতাম, চোখেও পড়ত। এই চাপ নিতে না পেরে একদিন এক বয়স্কা রোগী বলেই ফেললেন – আমাকেও এইভাবে প্লাসিকে বেঁধে এখান থেকে নিয়ে যাবে, আমি আর বাড়ি ফিরতে পারব না। নার্সরা এসে তাকে বোঝালেন। আমি সবসময় মনের জোড় রেখেছি বাড়ি আমি ফেরত যাবই, তাতে এখানে যতদিন কষ্ট করে থাকতে হয় থাকব। এইভাবে চলতে চলতে আঠার দিন পরে আমি আই সি ইউ থেকে বাইরে এলাম।
এরপরে জেনারেল বেড। সবাই অসুস্থ হলেও আপাত দৃষ্টিতে সুস্থ, কথা বলছে , গল্প করছে। আমার ভালই লাগছিল। এখানে গায়ে মনিটারের তার নেই । নাকেও পুরো ঢাকা মাস্ক নয়। শুধুমাত্র দুই নাকে সরু পাইপ দিয়ে অক্সিজেন যাচ্ছে। ওখানে বেড থেকে নামতে দিত না। এখানে ওরা ধরে ধরে নামাচ্ছে। বেশ ভাল লাগছিল। কিন্তু এখানেও বাড়ির লোকের বেশী ভালবাসাটা আমার চোখ এড়াল না। আমাদের সকলেরই সকালে, দুপুরের খাবারের আগে ও রাতের খাবারের আগে সুগার মাপা হত। তাতে অনেকেরই ইন্সুলিন লাগত। এই অবস্থায় সামনের বেডে ও পাশের বেডে বাড়ির লোকের বেশী ভালবাসা আবার আমার চোখে এল। সামনের বেডে বয়স্ক এক মানুষ ছিলেন। তার ছেলে রোজ দেখা করতে আসত। বিস্কুট, চিঁড়েভাজা এসব দিয়ে যেত। একদিন দেখি এই ভদ্রলোক ডেয়ারী মিল্ক খাচ্ছেন। যেটা এই অবস্থায় খাওয়া একদমই ঠিক না। আমার এই অভিজ্ঞতা লেখার কারণ শুধুমাত্র এই ভুল যেন আর কেউ না করে। ভালবাসাকে সরিয়ে একটু বাস্তববাদী হবার জন্য।
তারপরে এল সেই দিন। আমাকে ডাক্তারবাবু বললেন – তোমাকে দিন কয়েক বাদে ছেড়ে দেব, তবে বাড়ি গিয়েও সাত , দশ দিন অক্সিজেন সাপোর্টে থাকতে হবে। আমাদের বাড়িতে সেই মত ব্যবস্থা হবার পরে আমি সতেরই মে রিলিজ হয়ে বাড়িতে এলাম। ধীরে ধীরে সাবধানে ডাক্তারবাবুর কথামত চলার চেষ্টা করছি। এখনও আমার লড়াই চলছে, আমি প্রতিদিনই অক্সিজেনের বাইরে চলে আসার জন্য যা যা করতে হয় করে চলেছি। কাজেই হারার আগে কেউ হারবেন না। মনের জোড় রাখুন , জিত হবেই। আমার অভিজ্ঞতা যদি একজনেরও কিছু উপকারে আসে তাহলেই এই লেখা সার্থক।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন